নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৫ কোম্পানি তাদের নিরীক্ষক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। এতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার অমান্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে সঠিক সময়ে কোম্পানির কাছ থেকে কোম্পানির আয়-ব্যয়, মুনাফা ইত্যাদি সম্পর্কে অন্ধকারের রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, হিসাব বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হয় এবং তা পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে বিএসইসিতে দাখিল করতে হয়। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের ৫ কোম্পানি বিএসইসির এ আইনের কোন তোয়াক্কা করছে না। কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স এবং প্রিমিয়াম লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত বা ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের সমাপ্ত  অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অথচ কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স: শেয়ারবাজারে ২০০৩ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষনা করেছিলো।কিন্তু একজন শেয়ারহোল্ডারদের রিটের (writ petition (No. 8911/17) পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মাসের জন্য এজিএম স্থগিতের আদেশ দেয় হাইকোর্ট। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের গত ১০ আগষ্ট হাইকোর্ট এজিএমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। যে কারণে কোম্পানিটি ৩০ আগষ্ট এজিএমের পুন:তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট পুনরায় এজিএমের ওপর দুই মাসের স্থগিতাদেশ জারি করে। তারপর থেকে কোম্পানির দুই বছরের এজিএম ঝুলে আছে।

কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’১৮) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩.১৬ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় লোকসান ছিল ১.১৯ টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৮) কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১.১৭ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় লোকসান ছিল ০.৭২ টাকা।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স: কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তি হওয়ার প্রথম তিন বছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলেও ২০১৭ সালে কোম্পানিটি নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে জেড ক্যটাগরিতে স্থান্তান্তর হয়। কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’১৮) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১.৩০ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় লোকসান ছিল ৫.১০ টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৮) কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.১৩ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় লোকসান ছিল ০.৬৭ টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স: এ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটি ২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ২০১৭ সালের সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’১৮) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৬০ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় ইপিএস ছিল ০.৪৮ টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৮) কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.০৭ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় ছিল ১.১৪ টাকা।

এ বিষয়ে কোম্পানির সচিব মো. রাহাত শেয়ারবাজারনিউজকে জানান, আমাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অডিট করা হচ্ছে। তাদের রিপোর্ট পর্যালোচনা করার শেষেই আমরা আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবো। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া  হবে।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স:  ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটি গত ৩ বছর দরে শেয়ারহোল্ডারদের কোন প্রকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। আর এতে কোম্পানিটি জেড ক্যাটাগরি  অবস্থান করছে। কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’১৮) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত লোকসান হয়েছে ০.৬৯ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় শেয়ার প্রতি সমন্বত আয় (ইপিএস) ছিল ০.৪২ টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৮) কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত লোকসান হয়েছে ০.২০ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) ছিল ০.১৬ টাকা।

প্রিমিয়াম লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স: এ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটি ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ২০১৭ সালের সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিলো। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’১৮) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ০.০৪ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় শেয়ার প্রতি সমন্বত আয় (ইপিএস) ছিল ০.৫৮ টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৮) কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত লোকসান হয়েছে ০.০৪ টাকা। যা আগের বছর ্একই সময় শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) ছিল ০.১৫ টাকা।

Source: শেয়ারবাজারনিউজ