কোন কাজ হল না এত ঢাকঢোল পিটিয়ে অর্থমন্ত্রীর একটি বড় আয়োজনের পরেও। বাজার আজ মঙ্গলবার আবার কমেছে ৩১ পয়েন্ট। সব স্টেক হোল্ডার নিয়ে একটি বিশাল সাইজের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী গতকাল সোমবার যে অশ্বডিম্ব পেড়েছিলেন তার আকার আকৃতি দেখেই আমাদের ধারনা হয়েছিলো উনি ফেল করতে যাচ্ছেন। মুখের নীতিকথা দ্বারা বাজার ভালো করার দিন শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। উনি নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন তাই হয়তো বিষয়টি বুঝতে পারেননি। আন্তরিকভাবে বাজার ওঠাতে চাইলে বৈঠকে বসেই যদি গভর্নরকে বলে দিতেন, এখনই এক্সপোজার নিয়ে কি সমস্যা আছে সমাধান করুন। এসইসির চেয়ারম্যানকে যদি বলে দিতেন, টু সিসি আইনের লঙ্ঘন কে কে করেছে তাদের তিন দিন সময় দিয়ে এরপর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া শুরু করুন। ডিএসইর প্রতিনিধিকে যদি বলে দিতেন, ১০ টাকার কমে কোন কোন শেয়ার আছে সেই কোম্পানিগুলোকে জানিয়ে দিন ইস্যু প্রাইস মূল্যে আগামিকাল থেকেই তাদের শেয়ার বাই ব্যাক করে কিনে নিতে হবে। যে চারটি ব্যাংকের এমডিগন বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের যদি বলে দিতেন, আগামি ৭ দিনের মধ্যে আপনারা প্রত্যেকে এক হাজার কোটি টাকা করে মোট ৪ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কিনবেন। তাহলেই দেখতেন আজ ছোট বড় সব শেয়ার হল্টেড হয়ে বসে থাকতো। সূচক বাড়তো ৩০০ পয়েন্ট। লেনদেন ছাড়াতো হাজার কোটি টাকা। আমরা চ্যালেঞ্জ দিলাম, অর্থমন্ত্রী এই চারটি কাজ করুক আর বাজার যদি সাত দিনের মধ্যে সূচকের ছয় হাজার পয়েন্টে না যায় তাইলে আমরা আমাদের সব লেখালেখি বন্ধ করে গ্রামে চলে যাবো। নীতি ধুয়ে পানি খেলে কোন বিনিয়োগকারীর পেট ভরবেনা। পাঁচ হাজারের নীচে চলে আসছে সূচক আর সে অবস্থায় অর্থমন্ত্রী নীতি খাটিয়ে বাজারকে সুস্থ করার দাওয়াই দিচ্ছেন। উনি না হয় বাজারের প্রয়োজন জানেন না। কিন্তু শেয়ার বাজার থেকে যে রথী-মহারথীরা গিয়েছিলেন তারা কি শুধু নাস্তা-পানি খাওয়ার জন্যই গিয়েছিলেন নাকি মন্ত্রীর সাথে সেলফি তুলতে গিয়েছিলেন। তারা তো আমার এই প্রস্তাবনাগুলোর খবর জানেন, তারা কেন এগুলো সেখানে তুললেন না। তাদের বক্তব্য আমরা পাচ্ছিনা কেন? বাজার নিয়ে আসলে কি হচ্ছে? সরকার কি আসলেই বাজারকে উঠানোর জন্য অন্তরিক নাকি মুখের কথা দিয়ে সব ঠিক করতে চাচ্ছে। আরো অনেক পয়েন্ট আছে বাজার ভালো করার জন্য। প্রয়োজনে আমাদের সাথেও বসুন। তবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসতে হবে যে, কোনো পরামর্শ কাগজে লিখে নেয়া যাবেনা-বৈঠকে বসেই তাৎক্ষনিক বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্তত সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা পাঠাতে হবে। রাজি হলে আসেন বসি। দেখি বাজার ভালো না হয়ে কোথায় যায়।
এদিকে আজ মঙ্গলবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বৈঠকের পরদিনই মধ্যম আকারের একটি পতন দিয়ে বাজার শেষ হয়েছে। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯ ও ডিএসই-৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৪৭ ও ১৭৫২ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ ৪৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার। অর্থাৎ আজ ডিএসইতে লেনদেন ৪৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি হয়েছে।
ডিএসইতে আজ ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭১টির বা ২০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৩৬টির বা ৬৭ শতাংশের এবং ৪৬টি বা ১৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের। এদিন কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা মুন্নু জুট স্টাফলার্সের ১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার এবং ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
ডিএসইর টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, স্কয়ার ফার্মার, জেএমআই সিরিঞ্জ, স্টাইলক্রাফট, মুন্নু সিরামিক, ইউনাইটেড পাওয়ার এবং বিকন ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৭টির, কমেছে ১৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দর। আজ ৩৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।