পুঁজিবাজারের গতি ফেরাতে সাম্প্রতিক সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপে বাজারে তারল্যের সঙ্গে বাড়বে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও। তবে তাতে একটু সময়ের প্রয়োজন। কেননা বেশকিছু বিষয় এর সাথে রিলেটেড। এগুলো সম্পন্ন না করা পর্যন্ত বিনিয়োগে আসতে পারছেন না প্রাতিষ্ঠানিকরা। যে কারণে সূচকে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে ও ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থ সরবারহের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিরও আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়া বিএসইসিও বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে অনলাইন প্লার্টফরম চালু হচ্ছে। কাজেই অস্থিরতা কাটিয়ে পুঁজিবাজারে গতি ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তবে কেউ কেউ বলছেন, চলতি হিসাবের ঘাটতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খোলাবাজারে ডলার বিক্রি এবং প্রাইমারি বাজারের তথা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বাজারের দৈন্যদশা। অর্থাৎ গত ১০ বছরে আইপিও বাজারে যারা এসেছে। এর বেশির ভাগের দামই বর্তমানে শুরুর দিনের তুলনায় অনেক নিচে। মানহীন নানা কোম্পানিকে বাজারে এনে আমরা প্রাইমারি বাজারটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছি। এর দায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জ—উভয়কেই নিতে হবে। কারণ, তাদের দায়িত্ব ছিল বাজারে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার। কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া আছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক তারল্যসংকট, সুশাসনের অভাব, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট আর কারসাজির ঘটনা। কাজেই পুঁজিবাজারের গতি ফেরাতে সমস্যার মৌলিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরু থেকেই কিছুটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায় সূচকে। রোববার লেনদেন শেষে সূচক কিছুটা বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৯৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১৪৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ০.৯৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭৬৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৫টির, কমেছে ১৯২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৮৪ কোটি ১২ লাখ ৩ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৯৬৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৪৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৭৬৮ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪১১ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২৭ কোটি ৬১ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪২টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ১১৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ২০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে পুঁজিবাজারে তারল্য কিছুটা বাড়বে। আর তারল্য ও আস্থা বাড়লে অবশ্যই পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে পড়ে যেনতেন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। দাম বাড়ছে দেখে লোভে পড়ে দুর্বল ‘জেড’ গ্রুপের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো ভালো কোম্পানি বাছাই করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা সচেতন না হলে বাজার শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে না বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।