আগের দিনের অস্থিরতা ঝেড়ে ফেলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে অর্থাৎ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সূচক ও বেশিরভাগ শেয়ার দর বেড়েছে। তবে শুরুর দিকে শেয়ার কেনাবেচার হার প্রায় সমান সমান ছিল। কিন্তু শেষ দিকে শেয়ার কেনার চাপ বেড়ে গেলে বাজারের গতিপথ ইতিবাচক দিকে মোড় নেয়। আজ অন্যান্য খাতে কিছুটা ভিন্ন চিত্র থাকলেও এগিয়ে ছিল প্রকৌশল ও টেলিযোগযোগ খাত। আর বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন টেলিযোগাযোগ খাতে থাকা গ্রামীণফোনে। যদিও ছোট খাতগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি আগ্রহের শীর্ষে ছিল। তবে সূচকের উত্থানে মূল ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন। শেয়ারটির দর আজ ৫ টাকা বেড়েছে। আর ডিএসইর প্রায় ৩০ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধিতে জিপির অবদান ছিল ৯ পয়েন্ট। অন্যদিকে, ইউনাইটেড পাওয়ারে অবদান ৬ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মার ৩ পয়েন্ট এবং বিএটিবিসির অবদান ছিল ২ পয়েন্টেরও বেশী। পাশাপাশি লেনদেন এগিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রকৌশল খাত। ডিএসইতে হওয়া মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ অবদান রেখেছে খাতটি। আর ১৩ শতাংশ অবদান ছিল বস্ত্র খাতে। এবং ১১ শতাংশ করে অবদান রয়েছে ইন্স্যুরেন্স ও জ্বালানী খাতে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর বাজেটেই পুঁজিবাজার নিয়ে প্রত্যাশা থাকে। তবে এবার বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সেটা হয়তো সরকার বিবেচনা করবে। এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা তালানিতে থাকা বাজারের প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট হয়েছেনা। যার প্রভাব পড়েছে আজকের সার্বিক সূচকে। এছাড়াও ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন সুদের পরিমাণ সিঙ্গেল ডিজিটে আনার জন্য। এটি হলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালো হবে। কাজেই পুঁজিবাজারকে ভালো করতে হলে এ বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

কেউ কেউ বলছেন, একটি দেশের অর্থনীতি যখন বড় হয়, তখন বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশে জিডিপির আকার প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়ে। আরও বাড়ে মাথাপিছু আয়। এর প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। পাশাপাশি কমতে থাকে মূল্যস্ফীতি, আমানত ও ঋণের সুদহার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বর্তমানে এসব লক্ষণ দৃশ্যমান। উদীয়মান অর্থনীতির দেশে পুঁজিবাজারও কিন্তু বড় হতে থাকে। বাড়ে এর লেনদেন ও গভীরতা। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোনো প্রভাব পড়ে না। পুঁজিবাজারের গতি-প্রকৃতি ও আচরণ পর্যবেক্ষণে মনে হবে, দেশের অর্থনীতিতে কোনো গতি নেই। কেন এমন হচ্ছে, তার সঠিক ব্যাখ্যাও দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। কাজেই অর্থনীতি অগ্রগতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হবে।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫৪১০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১২৪১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৯১১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৩টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৬টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫৩৮০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.৭৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১২৩০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৮৯৬ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৫৩ কোটি ৩৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০ হাজার ৩৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১০৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা হচ্ছে, বাজারে যেসব কোম্পানি আসে সেগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নৈতিকতার অনেক অভাব রয়েছে। আবার অনেক বিনিয়োগকারীর বাজার সম্পর্কে দক্ষতার অভাব রয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালোভাবে না বুঝে মার্জিন ঋণ নিচ্ছে এবং অন্যজনের কথা শুনে শেয়ার কেনাবেচা করছে। আবার অনেকে অন্যজনের কথায় লাখ টাকা বিনিয়োগ করছে। যখন ওই কোম্পানির শেয়ারদর কমে যায় তখনই বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা শুরু করে। কাজেই সচেতন বিনিয়োগকারী হিসেবে এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।