যন্ত্রপাতি মেইনটেন্যান্সের জন্য আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ৩ নম্বর প্লান্টের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। পাশাপাশি সংস্কারের জন্য ছয় মাস বন্ধ রাখার পর গত রোববার থেকে ১ নম্বর প্লান্টে উৎপাদন শুরু হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। এর বাইরে কোম্পানিটির বাকি দুটি টাইলস প্লান্টে উৎপাদন চালু রয়েছে।
জানতে চাইলে আরএকে সিরামিকসের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, কারখানার নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যন্ত্রপাতি মেইনটেন্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে যন্ত্রপাতির দক্ষতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ে। যে চিমনিতে টাইলস পোড়ানো হয় সেটিকে উত্তপ্ত করতে যেমন অনেক সময় লাগে, তেমনি এটিকে ঠাণ্ডা করতেও একই সময় লাগে। তাই চাইলেই অন্য যন্ত্রপাতির মতো এটিকে বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই মেইনটেন্যান্স করা যায় না। এ কারণেই মূলত টাইলস প্লান্টে সংস্কারকাজে কিছুটা বেশি সময় লাগছে বলে জানান তিনি।
এর আগে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য গত বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে প্লান্ট-১-এর উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল আরএকে সিরামিকস। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে এ বছরের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় কাজের মেয়াদ আরো প্রায় ২০ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটির ম্যানেজমেন্ট। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সেখানে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও সে সময়ের মধ্যে এটি শুরু করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ সংস্কারকাজ শেষে গত রোববার থেকে প্লান্টটিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে আরএকে সিরামিকস। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সম্মিলিতভাবে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৯ পয়সা। সম্মিলিতভাবে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৯৭ পয়সা। আগের হিসাব বছর কোম্পানির পুনর্মূল্যায়িত ইপিএস ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা। সে বছর এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১৮ টাকা ২৫ পয়সা।
২০১৭ হিসাব বছরের জন্যও ২০ শতাংশ (১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক) লভ্যাংশ দিয়েছিল আরএকে সিরামিকস। এছাড়া ২০১৬ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা ২০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক এবং ২০১৫ হিসাব বছরে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন।
ডিএসইতে গতকাল আরএকে সিরামিকস শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৩২ টাকা ৭০ পয়সা। দিনভর শেয়ারটির দর ৩২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৩৩ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। গতকাল সমাপনী দর ছিল ৩২ টাকা ৯০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৩২ টাকা ও ৫১ টাকা ৭০ পয়সা।
২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক রাস-আল খাইমার গ্রুপের একটি যৌথ উদ্যোগ। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৬০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। রিজার্ভ রয়েছে ১২৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭০১টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৭২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ১০ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বাকি ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ১৫ দশমিক ৮২, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ১৭ দশমিক ১৪।