ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত আয়কর বাবদ ২০ কোটি ৯৬ হাজার ৮৬৭ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটি চরম অর্থ সংকটে থাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ টাকা ফেরত পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করা হয়েছে। কোম্পানি ও এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, ন্যাশনাল টিউবসকে অগ্রিম আয়করের টাকা ফেরত দিতে সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টিউবস উৎপাদিত পাইপের ৯০ শতাংশ এপিআই পাইপ। যার ক্রেতা পেট্রোবাংলার অধীন গ্যাস কোম্পানিগুলো। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় গ্যাস কোম্পানিগুলো পাইপ কেনা বন্ধ করে দেয়। এতে ন্যাশনাল টিউবস বর্তমানে প্রকট আর্থিক সংকটে পড়েছে। ফলে কাঁচামাল আমদানিসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বর্তমান আর্থিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অগ্রিম আয়করের টাকা ২০ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টিউবসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) অগ্রিম করের টাকা ফেরত চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছিল। কিন্তু এনবিআর থেকে এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিল্প সচিব ন্যাশনাল টিউবসের কারখানা পরিদর্শন করেন। এ সময় অগ্রিম পরিশোধিত আয়করের সঙ্গে প্রকৃত আয়কর সমন্বয় করে ফেরতযোগ্য আয়কর ফেরত নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে তা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন।
২০ কোটি টাকা অগ্রিম আয়করের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০০৫-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত আট বছরে ফেরতযোগ্য অগ্রিম আয়কর দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৪১ হাজার ৭২২ টাকা। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ কোটি ৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৬৬, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ২১৭, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫২, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার ৮২৭ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯১৮ টাকাসহ মোট ২০ কোটি ৯৬ হাজার ৮৬৭ টাকা ফেরত চেয়েছে ন্যাশনাল টিউবস।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল টিউবসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল খায়ের সরদার বণিক বার্তাকে বলেন, অগ্রিম আয়করের ফেরতযোগ্য ২০ কোটি টাকা আমরা এনবিআরের কাছে ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এ টাকা ফেরত দিতে এনবিআরের কত সময় লাগবে, আমরা জানি না। আশা করছি, দু-তিন মাসের মধ্যে একটা সমাধান হবে।
এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল টিউবসের ফেরতযোগ্য অগ্রিম আয়করের টাকা ফেরতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল-১০-কে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ২৪ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৯ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭৫ টাকা ৭ পয়সা।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে ন্যাশনাল টিউবস। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ২ টাকা ৫ পয়সা। ২০১৭ হিসাব বছরেও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। সে বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৮৬ পয়সা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ন্যাশনাল টিউবস শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১১৯ টাকা ৬০ পয়সা। সমাপনী দর ছিল ১২০ টাকা ১০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৯৮ টাকা ৩০ পয়সা ও ১৩০ টাকা।
ব্যক্তিমালিকানায় ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল টিউবস ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় যায়। ১৯৮৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৫২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানির দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, ৫১ শতাংশ সরকারের কাছে, ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ও বাকি ৩৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।