Decision Maker

আশানুরূপ গতি ফিরছে না পুঁজিবাজারে

তারল্য সংকট কাটাতে সহায়তা তহবিলের অর্থ পেয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। আর এ অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ করার ফলে আজ সূচক কিছুটা ইতিবাচক হয়েছে। তবে লেনদেন কমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের কোনো মিল নেই। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে বিনিয়োগসীমা অর্থাৎ এক্সপোজার লিমিট বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও বাজারে আশানুরূপ গতি ফিরছে না। মূলত আমাদের বাজারে ইকুইটির পরিমাণ কম। অন্যদিকে চাহিদাও কম। কম ইকুইটি দিয়ে বাজার ভালো করা যাবে না। ফলে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করতে সুবিধা হয়। বাজার ভালো করতে হলে প্রায় এক হাজারের বেশি ইকুইটি আনতে হবে। তবে এটি সরকার বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে ইচ্ছা করলেই পারে। ৯ বছরে প্রায় ১০০’র বেশি কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওইসব কোম্পানির বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। আর স্বল্প মূলধনি কোম্পানি ভূরিভূরি আনলেও বাজার ভালো হবে না। যেসব কোম্পানি আনলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো না আনাই ভালো। আর যেসব কোম্পানির চাহিদা রয়েছে এবং বাজার উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে সে ধরনের কোম্পানি আনতে হবে বলেও মনে করনছেন তারা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, এক্সপোজার সমস্যা সমাধান হওয়ায় ব্যাংক থেকে অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে এটাই স্বাভাবিক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাজার সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনা ও অর্থ সংগ্রহ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে পুঁজিবাজার ভালো করা যাবে না। এতে বাজার ক্রমান্বয়ে আরও খারাপের দিকে যাবে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংক ঋণখেলাপি। ধীরে ধীরে সব ব্যাংকই যদি ঋণখেলাপি হয়, একদিন দেখা যাবে বাংলাদেশই খেলাপি হয়ে যাবে, এটি অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। অতএব, আমরা যতই বলি দেশের অর্থনীতি ভালো এবং আরও অগ্রসর হবে এটি সত্য। কিন্তু ব্যাংক খাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে যেমন ব্যাংক খাত ভালো হবে না; অন্যদিকে পুঁজিবাজারও ভালো করা যাবে না। কারণ, মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেট উভয়ে একে ওপরের সঙ্গে জড়িত। বাজার ভালো করতে হলে ব্যাংক থেকে যে অর্থ সরবরাহ করা হয়, সেটি সঠিক সময়ে আসতে হবে এবং সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে হবে। আবার ব্যাংক থেকে বাজারে যে অর্থ বিনিয়োগ হয়, সেক্ষেত্রে কিছু নিয়মের পরিবর্তন আনতে হবে, তাহলেই বাজার হয়তো কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। শুধু প্রণোদনা দিয়ে বা প্লেসমেন্ট, আইপিও শেয়ার বন্ধ করে বাজার ভালো করা যাবে না।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে কিছুটা ভিন্ন চিত্র থাকলেও শেষের দিকে সৃষ্ট ক্রয় চাপে ঘুঁড়ে দাঁড়ায় বাজার। বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫২৫০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১৯৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮৩০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯১টির, কমেছে ৯২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৯টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৯০ কোটি ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৩৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫২৩৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১৯৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮২২ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি ৬৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬১ কোটি ১৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭০৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২২৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট- ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার ওঠানামা করবে এটাই তার ধর্ম। এটি বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার ভিন্ন আচরণ করে। বাজারে টিকে থাকাই বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীদের কাজ। তবে সার্বিকভাবে আমাদের বাজার আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা দরকার। যদি বাজারকে ঠিক রাখা যায় তাহলে শিল্পায়নও সম্প্রসারিত হবে বলেও ধারনা করছেন তারা।

Exit mobile version