মন্দার রেশ কাটিয়ে পুঁজিবাজারে ফিরতে শুরু করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এরই জের ধরে গত কয়েক কার্যদিবস যাবৎ বাজারচিত্র কিছুটা স্বাভাবিক। ফলশ্রুতিতে গতকালের ন্যায় আজও উত্থান হয়েছে সূচকে। আর বিনিয়োগকারীদের ফেরা পুঁজিবাজারের জন্য শুভ লক্ষণ। কারণ তারা বিনিয়োগবিমুখ থাকলে বাজার কখনোই স্বাভাবিক হতে পারবে না। তারা ফিরে আসা সকলের জন্যও ভালো খবর। কারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন না করলে সব পক্ষকেই হিমশিম খেতে হয়। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীল এবং উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নগদ লভ্যাংশে উৎসাহিত করণ, অতিরিক্ত রির্জাভে কর আরোপসহ নানামুখী উদ্যোগে পুঁজিবাজারের আইনগত ভিত্তি ও কাঠামো তৈরী হয়েছে। এখন অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরের মতো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবার অপেক্ষায় রয়েছেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। কেননা পুঁজিবাজারকে গড়তে নানামুখী তৎপড়তা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গড়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাজেই আগামী দিনে পুঁজিবাজার ভালো হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও বাজার মাঝে মাঝে কিছুটা ভিন্ন আচরণ করে। তথাপি ধৈর্য্কহারা না হয়ে পুঁজিবাজারের প্রতি সবাইকে আস্থা রাখতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

তারা আরও বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে সৃষ্ট পতনে এখন বেশীরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরই তলানিতে। আর মন্দা বাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় জেনেই দেশের নানা পেশার মানুষ আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। এখন অতীতের হতাশা দূরে ঠেলে ভালো একটি পুঁজিবাজার পাবেন এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা। নতুন অর্থবছরে নতুন মাইলফলকে পৌঁছাবে দেশের পুঁজিবাজার এমন প্রত্যাশায় আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই ক্রয় চাপে বাড়তে থাকে সূচক। তবে শেষ দিকে উত্থানের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পায়। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫২২৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১২০২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮৪৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫২টির, কমেছে ১৫২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৮৫ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫২১৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৯৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৮৪১ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৩ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৬১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭১৮ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৯টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২১টির, কমেছে ১০৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারের আকার মোট জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ। এটিকে যদি আরেকটু বাড়ানোর দায়িত্ব আমাদের নীতিনির্ধারকদের। এখানে প্রথম দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের, তারপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ওনাদের কাজ হচ্ছে শুধু নীতিগুলো প্রণয়ন ও কার্যকর করা। আর যেকোনো দেশের উন্নয়নের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখে পুঁজিবাজার। যদিও তুলনামূলক বাংলাদেশের শিল্পায়নে পুঁজিবাজারের অবদান নগণ্য। তবে আমাদের ডিমিউচুয়ালাইজড এ বাজারের অবস্থান দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এ কারণেই আগ্রহ বাড়ছে দেশি ও বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিকদের। কাজেই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সব ধরনের অপশক্তির অপচেষ্টা পরিহার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে একটা ভারসাম্য আনতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস তাদের।