Decision Maker

এতোকিছু হওয়ার পরও মার্কেটের গ্রোথ হলো না

২০১১ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুনর্গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক আইন-কানুন তৈরি হয়েছে। অনেক বিধি-বিধান পরিবর্তন হয়েছে। গত ৯ বছরে ৯২টি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। কিন্তু নতুন শেয়ার আর স্টক ডিভিডেন্ডের মহড়ায় যেভাবে শেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে সেভাবে বাড়েনি বাজার মূলধন, বাড়েনি সূচক।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমানে যেখানে ব্রেক ইভেন হচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা; সেখানে ৩০০ কোটির ঘরে লেনদেন হচ্ছে। বিনিয়োগকারী, ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা বাজারে প্রতি এতোটাই বিরক্ত যে অনেক বিনিয়োগকারী এ মার্কেট থেকে চলে গেছেন। ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অপারেশনাল কস্ট বহন করতে কর্মী ছাটাই করতে হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে ঘিরে সম্পৃক্ত ২ কোটিরও বেশি মানুষ আজ অসহায়।

কারণ এ মার্কেটের কোনো গ্রোথ নেই। সেই যে ৮ বছর আগের সূচক ৪ হাজার থেকে ৬ হাজারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সেটাই রয়ে গেছে। কিন্তু এভাবেতো আর চলতে পারে না। বিনিয়োগকারীদের একটা আশা ছিলো নতুন সরকার আসলে বাজার ভালো হবে। সরকার আসলো, বিনিয়োগকারীদের জীবনে আশার আলোও এসেছিলো কিন্তু তা ছিলো মাত্র ২০দিনের জন্য।

সরকার প্রাইভেট সেক্টরকে উপেক্ষা করে সরকারি সেক্টরকে ক্রেডিট মুক্ত করছে। সরকার অনেক বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে, সরকার সেখানে ফান্ড দিচ্ছে। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে যারা ব্যবসা বাণিজ্য করছে তাদের অবস্থা বেহাল। অর্থমন্ত্রী মহোদয় বাংলাদেশকে কানাডা বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না, কানাডায় কেউ অভুক্ত থাকে না। আর আমাদের দেশে তিন মাস বেকার এক বাবাকে বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করতে হয়।

পুঁজিবাজারের এই ইদুঁর-বিড়াল খেলা বন্ধ করতে হবে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী এ মার্কেট থেকে বের হয়ে পড়ছেন। একেকজন বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও অবস্থা এতোটা নাজুক পর্যায়ে নেমে এসেছে যে বার বার হাউজ থেকে ফোর্স সেল করার চিঠি ইস্যু করা হচ্ছে। বেক্সিট ইস্যুতে ইংল্যান্ডের ইকোনমিতে ধ্বস নেমেছিল। লন্ডনের ইনডেক্স নামতে নামতে ৫৭০০’তে নেমে গেছিল। কিন্তু সে মন্দা বেশিদিন টিকেনি। ইউরোপ থেকে ইংল্যান্ড আলাদা হয়ে যাচ্ছে সে খবরেও ইনডেক্স ৭২০০। অর্থাৎ সে মার্কেটের গ্রোথ আছে। ২০১১ সালে মার্কেটে ধ্বস নামার পর আওয়ামী সরকারের আমলে পার ক্যাপিটাল ইনকাম ছিলো ৭০০ ডলার। সেটা আজকে দাঁড়িয়েছে ১৯০০ ডলার। কিন্তু এ পুঁজিবাজারের কোনো উন্নতি হয়নি।

এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্সপোজার গণনায় কস্ট প্রাইস আর মার্কেট প্রাইসের হিসেব নিয়ে মার্কেটকে এতো চেপে রেখেছে যে মার্কেট সামনের দিকে যেতে পারছে না। খোদ সাবেক অর্থমন্ত্রী একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংককে এই এক্সপোজারের বিষয়ে সংশোধন আনতে বলেছ্নে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কারো ধার ধারে না। তার কাছে সামগ্রিক অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজার একটি ক্ষুদ্র অংশ। অথচ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২সিসি অস্ত্রের কাছে যে বাংলাদেশ ব্যাংক অসহায় তা বেশিরভাগ ব্যাংক জগতের মানুষ জানলেও স্বীকার করতে চায় না। ব্যাংকের এক্সপোজার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা অনেকদিন ধরেই বলে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবিক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি বিএসইসি’র সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলা হলেও কোনো দৃশ্যত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পুঁজিবাজারের গ্রোথ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক্সপোজার ইস্যুতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সেই অপেক্ষায় লাখো বিনিয়োগকারী।

Exit mobile version