সময়ের পালাবদলের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঋতুরাজ বসন্তের অভিষেক ঘটেছে অনেক আগেই। কঠিন শীত উপেক্ষা করে আগুন ঝরা ফাগুনের আহবানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা কুড়াচ্ছে সর্বত্রই। কিন্তু দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক সেক্টর থেকে শীত গেলেও প্রকৃতির সেই খেয়ালি আচরণ বদলায়নি পুঁজিবাজার থেকে। দীর্ঘ মন্দায় পুঁজিবাজার যেন কুয়াশার ঘন চাদরে ঢাকা। যা বিনিয়োগকারীদের হতাশা প্রতিনিয়ত বাড়িয়েই চলছে। তবে আজ হঠাৎ করে সেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পুঁজিবাজারেই দেখা গেল আলোর ঝলকানি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের বড় সমস্যা হলো তারল্য সংকট। এ সংকট কাটাতে বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি নরওয়ের একটি কোম্পানি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি তারল্য বাড়াতে নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে সরাসরি অথবা সাবসিডিয়ারীতে ঋণ প্রদাণের মাধ্যমে পোর্টফোলিওর আকার বৃদ্ধি করে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এসব খবরেই হঠাৎ করে আজ সূচক কিছুটা বুদ্ধি পেয়েছে। তবে এর আগেও অনেকবার ইতিবাচক খবর শুনে বিনিয়োগকারীরদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তারা ভেবেছিলেন পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে একটি ইতিবাচক ধার আসবে। কিন্তু একের পর এক তাদের সেই প্রত্যাশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই সাম্প্রতিক নেয়া উদ্যোগগুলো পুঁজিবাজারে যেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এমনটাই চাইছেন তারা।

কেউ কেউ বলছেন, বাজার সম্প্রসারিত করতে সরকারের আন্তরিকতা আছে। তারা চায় একটি স্বচ্ছ বাজার সৃষ্টি হোক এবং পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হোক। আর আস্থা সৃষ্টি না হলে বিনিয়োগকারীরাই বা কেন বাজারে আসবেন। কেননা দেশের বিনিয়োগকারীরা বহুবার আস্থা নিয়ে এসেছেন এবং নিরাশ হয়ে ফিরে গেছেন। তবে এখন যদি নিয়ন্ত্রকদের আচরণ সহযোগিতাপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা আশা করতে পারি বাজারে আরেকটু স্বচ্ছতা বাড়বে। ফলে আরও জনপ্রিয় হবে পুঁজিবাজার। তাছাড়া যেখানে মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখেই আস্থা পায়নি, সেখানে পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছরে যেভাবে উত্থান-পতন হয়েছে তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে আরেকটু সময় লাগবে বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৯২০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১৫০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭৬৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৫টির, কমেছে ১০৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩০৪ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৩২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৮৫৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১২৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ০.০৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৭৩৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৮০ কোটি ২৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩২টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২২টির, কমেছে ৭৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভালো সময় যেমন থাকে, তেমনি মন্দ সময়ও থাকে। কখনও কখনও মন্দ সময়টাই দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ সময়টা ধৈর্য ধরে বাজারে থাকতে হয়। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ যদি ভালো কোম্পানির শেয়ার কম দামে কেনা থাকে, তবে আজ হোক আর কাল হোক সেটার দাম বাড়বেই। দেশের পুঁজিবাজারে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কোম্পানিগুলোকে বাজারবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মন্তব্য করছেন তারা।