বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানাবিধ সংস্কার এবং অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে প্রনোদনা দেয়ারও কথা রয়েছে। এরই অংশহিসেবে বাজেটে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছু থাকবে এমনটা স্বাভাবিক। এমনকি কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হতে পারে! কেননা বাজেটে বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হবে। বাজেটে এমন কিছু থাকবে না যা পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক হয়। এমন ধারনা থেকে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে ঈদের ছুটি শেষে পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে ইতিবাচক হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আজ দেশের উভয় স্টক এক্সচেক্সে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৬০০ কোটি টাকা কাছাকাছি। যা গত ১৮ মার্চ বা ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন বাজেটে ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জের কর অবকাশ সুবিধা বৃদ্ধি করা, করমুক্ত আয় ও করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের পরিমাণ বাড়ানো, বহুজাতিক কোম্পানি ও স্থানীয় ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোকে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান বাড়ানো। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে আয়কর হার ০.০৫ শতাংশ থেকে পূর্বের ০.০১৫ শতাংশ নির্ধারণ, আইপিওতে ২০ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করা কোম্পানিকে এক বছরের পরিবর্তে তিন বছর ১০ শতাংশ হারে কর রেয়াত সুবিধা। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে মূলধনি লাভের ওপরে ১০ শতাংশের পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ করহার এবং কমপক্ষে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর পুঁজিবাজারের স্বার্থে এসব সুপারিশ মেনে নেয়া হলে বাজারের অগ্রগতিতে আর কোন বাধা থাকবে না বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।
তবে কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে এবারের বাজেটে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে খুব বেশি নতুনত্ব নেই। প্রস্তাবনাগুলো গতানুগতিক। ফলে এটা পুঁজিবাজারের খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবে বাজেটে বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা বাজেটে বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চান। আর এটা হলে বিনিয়োগকারীরা বেশি উপকৃত হবেন বলেও ধারনা তাদের।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে সূচকের ইতিবাচক প্রবণতায় শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরু থেকেই সৃষ্ট ক্রয় চাপে টানা বাড়তে থাকে সূচক। মঙ্গলবার সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫৪৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১২৪৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৯২১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টির, কমেছে ৭৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৩টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৫৭৮ কোটি ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫৪৩১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১২৩২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৯০১ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ৮৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৯৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০ হাজার ১৫৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৮টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭১টির, কমেছে ৫৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা আস্থার। তাই সামান্যতেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। এ কারণে যে কোন ইস্যু সামনে এলেন ভীত হয়ে পড়েন অনেক বিনিয়োগকারী। বিভিন্ন ছাড় পাওয়ায় এ মুহুর্তে বাজারে অর্থের সংকট খুব বেশি নেই। মূল সংকট আস্থার। ভালো কোম্পানির অভাবও এ আস্থা সংকটের বড় কারণ হতে পারে। কেননা ভালো কোম্পানির শেয়ার সহজে কেউ বিক্রি করতে চায় না। যেহেতু আমাদের বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম, তাই অল্পতেই বিনিয়োগকারীরা হাতের শেয়ার বিক্রি করে দেন। ফলে পতনের মাত্রা বাড়ে। এছাড়ও আমাদের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আর একটা সমস্যা সব সময় দেখা যায়, তাহল দাম বাড়তে থাকলে তাঁরা শেয়ার বিক্রি করেন না। মনে করেন দাম খালি বাড়তে থাকবে। আবার দাম কমতে শুরু করলে সবাই একসঙ্গে বিক্রি শুরু করেন। এটা একজন দক্ষ বিনিয়োগকারীর আচরণ নয় বলেও মনে করছেন তারা।