আগের সপ্তাহের ন্যায় এ সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতন ঘটেছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিন কমেছে সূচক। বাকি এক কার্যদিবস সূচক বাড়লেও এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তবে এতদিন পরিস্থিতি যাই হোক না কেন চলতি সপ্তাহ থেকে বাজার ঘুড়ে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এক্সপোজার সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। তারা চাইলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে। কাজেই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বাড়বে স্টেকহোল্ডারের আস্থা। বিষয়টি পুঁজিবাজারের বিকাশ ও গতিশীলতায় সাহায্য করবে বলেও মনে করছেন তারা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজার শুধু ইকুইটিনির্ভর। এখন সময় এসেছে ইকুইটিনির্ভর বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করতে হলে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আনতে হবে। বিশেষ করে বন্ড মার্কেটকে সম্প্রসারিত করতে হবে। বাজারে প্রায় ২২১টি ট্রেজারি বন্ড রয়েছে যেগুলো গত ১০ বছরেও কোনো ট্রেডিং হচ্ছে না। এগুলো অতিদ্রুত ট্রেডিংয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা হলে যারা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ করতে চায় তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এতে একদিকে ইন্টারেস্ট আরনিং এবং অন্যদিকে ক্যাপিটাল গেইন করতে পারবে। ইকুইটির ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটা কমে আসত। কাজেই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা দরকার। যদি বাজারকে ঠিক রাখতে না পারে তাহলে শিল্পায়ন সম্প্রসারিত হবে না।

এদিকে, সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ০.৮৫ শতাংশ বা ৪৫.০৫ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই-৩০ কমেছে ১.৭৯ শতাংশ বা ৩৩.১৪ পয়েন্ট। অপরদিকে শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক কমেছে ১.৮৬ শতাংশ বা ২২.৭৪ পয়েন্ট। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২২টির কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৯৫টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির এবং লেনদেন হয়নি ৩টির। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন মোট ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৫১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। তবে এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ১৪৪ কোটি ৮১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮০ টাকার। সেই হিসাবে সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৩১.৮৬ শতাংশ।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। আর সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেনের ৮৪ দশমিক ২৩ শতাংশই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের এবং দশমিক ৮৯ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।

অন্যদিকে, সপ্তাহশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ১১৩.৪৯ পয়েন্ট বা ১.১৫ শতাংশ বেড়ে সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৮৭ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে হাতবদল হওয়ার ২৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৯টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির। এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ৭৭ কোটি ৯১ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।