পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও (ব্রোকার) ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিলের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তদারক কমিটির সভায় তহবিলের অর্থ বিতরণ নীতিমালায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানা যায়, প্রণোদনা তহবিল থেকে অর্থ বিতরণ-সংক্রান্ত আগের নীতিমালা অনুসারে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই এ তহবিলের অর্থ বিতরণের সুযোগ ছিল। এর বাইরে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাজার মধ্যস্থতাকারীরা এ তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার যোগ্য ছিল না। কিন্তু পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নীতিমালায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তহবিলের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকট কাটবে এবং তারা বিস্তৃত পরিসরে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারবে। এজন্য নীতিমালা সংশোধন করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদারক কমিটি।

এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর তহবিলের সুদের হার নির্ধারণ করবে তদারক কমিটি। এক্ষেত্রে আগের সুদহারই বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া যদি এ তহবিল থেকে অর্থ নেয়ার জন্য কোনো বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান আগ্রহী না হয়, তাহলে তদারক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এককভাবে আইসিবির এ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ নেয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানা গেছে।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুনঃঅর্থায়ন সহায়তা দিতে একটি তহবিল গঠন করেছিল সরকার। বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সে ঋণ বিতরণ ও আদায় শেষে সুদাসলে তা সরকারকে ফিরিয়ে দেয় তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি। পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে সম্প্রতি নিম্ন সুদের ঋণ আকারে দ্রুত সে তহবিল চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় আইসিবি। অর্থ মন্ত্রণালয় এ অর্থের কাস্টডিয়ান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি লিখে এ প্রস্তাবে নিজেদের অনাপত্তি প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও একই মত দেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে তহবিলের অর্থ ব্যবহার-সংক্রান্ত প্রস্তাবের সম্মতিপত্রে বলা হয়, বর্তমান পুঁজিবাজারে লেনদেনে নিম্নগতির ধারা প্রতিরোধে প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ও আসলসহ আদায়কৃত ৮৫৬ কোটি টাকা পুনর্ব্যবহারের সম্মতি দেয়া হলো। আইসিবির মাধ্যমে এ তহবিলের অর্থ বিতরণ করা হবে। বিতরণকৃত ঋণের সুবিধাভোগী ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের তালিকা তৈরি ছাড়াও আরো বড় পরিসরে তারল্য জোগানের সম্ভাব্যতা নির্ধারণের কাজ বিদ্যমান তদারকি কমিটি সম্পন্ন করবে। তহবিলটির দেখভালও এ কমিটি করবে। এরই মধ্যে তহবিলটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।