তিন বছর ধরে শেয়ারবাজারের তিন কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক লোকসানের কারণে এ তিন কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সরেজমিন পরিদর্শনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ তিন কোম্পানি হলো মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিচ হ্যাচারি লিমিটেড ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড।

এর আগে দীর্ঘদিন ধারাবাহিক লোকসানে থাকা এ তিন কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা জানতে সরেজমিন তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।

সূত্র জানায়, এ তিন কোম্পানির কারখানা ও প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনে জানা যায়, তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু হবে কিনা এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, মেঘনা পিইটি পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে। তাই একই সময় ধরে তারা কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আর চলতি হিসাব বছরের তিন প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৩ পয়সা।

২০০১ সালে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি টাকা। পুঞ্জীভূত দায় ১৬ কোটি ৩০ লাখ। এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে এবং বাকি ৫৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর নির্ধারণ হয়েছে ১৩ টাকা। গত এক বছরে তাদের শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ২৬ টাকা ২০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ১০ টাকা ৩০ পয়সা।

জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমস্যার কারণে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাংকঋণ ও করখেলাপি হতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। অথচ তিন বছর আগেও কোম্পানিটি নিয়মিত মুনাফার পাশাপাশি লভ্যাংশ দিয়েছে।

তিন বছর ধরেই ধারাবাহিক লোকসানে থেকে লভ্যাংশও দিতে পারেনি। চলতি হিসাব বছরের তিন প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৬ পয়সা।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পান এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইতে গতকাল সমাপনী দর ছিল ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ৮ টাকা ৪০ পয়সা ও সর্বোচ্চ ২৪ টাকা ২২০ পয়সা।

২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। রিজার্ভ ২ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ১৪ লাখ ১ হাজার ২১। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রতিষ্ঠান ২২ দশমিক ২৬ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার।

নিয়মিত লোকসান, ঋণখেলাপি ও বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে না পারায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ২০১৫ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়েছে। এর পর থেকে কোম্পানিটি বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পারেনি। ২০১৬ সাল থেকে তাদের বিমান উড্ডয়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ডিএসইতে গতকাল ২ টাকা ৪০ পয়সায় কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ হাতবদল হয়। সমাপনী দর ছিল ২ টাকা ৫০ পয়সা। গত এক বছরে এ শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৪ টাকা ৫০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ২ টাকা ৪০ পয়সা।

২০১০ সালে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৮২৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৩ দশমিক শূন্য ৩১, বিদেশী বিনিয়োগকারী ১২ দশমিক ১৮ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৭০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শেয়ার।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৬৮ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৭ টাকা ১৪ পয়সায়।

২০১৭-১৮ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৩৪ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি। যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৪৪ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর এর এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৬ টাকা ৮০ পয়সায়। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

এর আগে ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ৬৬ পয়সা, যেখানে আগের বছর  ইপিএস ছিল ৩১ পয়সা। ২০১৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৮ টাকা ৭৫ পয়সায়।