২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে একগুচ্ছ প্রণোদনা পেলেও পেছনে হাঁটছে পুঁজিবাজার। আর অব্যাহত পতনে পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করছে। ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারালেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। বরং বিভিন্ন সময় দুর্বল কম্পানিকে বাড়তি প্রিমিয়াম দিয়ে পুঁজিবাজারে এনেছে। আর সেই শেয়ার কিনে লোকসানে পড়েছে তারা।
গতকাল রবিবার দুপুরে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দুর্বল কম্পানি ও বাড়তি প্রিমিয়াম দিয়ে তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার ইস্যু মূল্যের নিচে থাকায় বাইব্যাক আইন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করায় কমিশনের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছে তারা।
এবারের বাজেটে একগুচ্ছ প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। তবে বাজার ঊর্ধ্বমুখিতার পরিবর্তে নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে বিনিয়োগকারীরা। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছে তারা। বাজারের পতন ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না দিলে সারা দেশেই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, ‘বাজেটে প্রণোদনার পরও পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতন ঘটছে। কিন্তু কেন এমন পতন? সেটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও চুপ করে বসে আছে, আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমেছে। প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় কমিশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান দুর্বল কম্পানির শেয়ারে বেশি বেশি প্রিমিয়াম দিয়ে ইস্যুয়ার কম্পানির পক্ষে কাজ করছে। তিনি বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন না। দীর্ঘদিন থেকে ইস্যু মূল্যের নিচে থাকা কম্পানির জন্য বাইব্যাক আইন তৈরির দাবি জানিয়েছি কিন্তু সেটি করেননি। কেন করেননি? কার স্বার্থ রক্ষায় তিনি বসে আছেন সেটা জানতে চাই। পুঁজিবাজার নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে চেয়ারম্যান পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। এক মুহূর্তেই সবাই চায় আপনি পদত্যাগ করুন।’
পুঁজিবাজারে পতন চলছে : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় থাকায় পুঁজিবাজারের পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারের বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছে না। বরং কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করছে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছে। এতে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতন থামছে না। কমেই চলেছে লেনদেনের পরিমাণ। গতকাল রবিবার দেশের দুই পুঁজিবাজারে বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দামও হ্রাস পেয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৪ কোটি চার লাখ টাকা আর সূচক কমেছে প্রায় ৪৩ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি আট লাখ টাকা আর সূচক কমেছিল ৮ পয়েন্ট।
ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাতে ব্যাপক পতন : পুঁজিবাজারের দরপতনের মধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কম্পানির শেয়ারের দামে ব্যাপক পতন অব্যাহত রয়েছে। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই এই খাতের শেয়ারে বিক্রির চাপ বেশি। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১টির আর ২৭টির বা ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামে পতন ঘটেছে। আর দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কম্পানির ক্ষেত্রেও পতনের মাত্রা বেশি। এই খাতের ২২৩টি কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে দুটির, একটি শেয়ার লেনদেন হয়নি আর ২০টির শেয়ারের দাম কমেছে।