২০১১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যতাবাধকতা প্রদান করা হয়। এর পর কেটে গেছে ৮ বছর, কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে নতুন করে বিক্রয় করেছে তারা।
কিন্তু ৮ বছর পর এই নির্দেশনার সংযোজন, বিয়োজন করে নতুন করে নোটিফিকেশন জারি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এবার উদ্যোক্তা পরিচালকদের নতুন করে ছাড়া দেওয়া হবে না বলে হুসিয়ার করেছে বিএসইসি। পাশাপাশি উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ব্লকে নতুন করে মডিউল তৈরি করেছে সেন্ট্রাল ডিপোজিটারী বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
নতুন নোটিফিকেশন জারি হওয়ায় ও সিডিবিএলের তৎপরতার কারণে ঘোষণা ছাড়াতো উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রয় করতে পারবে না। বরং যেসকল উদ্যোক্তাদের নূন্যতম শেয়ার ২ শতাংশ ও সম্মিলতি ৩০ শতাংশের নিচে রয়েছে তাদের পর্ষদে থাকতে নতুন করে শেয়ার কিনতে হবে।
নতুন নোটিফিকেশন অনুযায়ী, ব্যর্থ ৪৬ কোম্পানির পরিচালকদের তাদের পদ ধরে রাখতে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনতে হবে। অন্যথায় ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানি রাইট ওফার, আরপিও, বোনাস শেয়ার, কোম্পানি একীভূতকরণসহ কোনো প্রকারের মূলধন উত্তোলন করতে পারবে না।
এছাড়া কোনো পরিচালক যদি এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়; তাহলে এই শূন্য পদ পূরণ করতে যাদের এই ২ শতাংশ পরিমাণ শেয়ার আছে তাদের থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিচালক মনোনীত করতে হবে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত উদ্যোক্তা পরিচালকগণ সম্মিলিতভাবে এই শেয়ারধারণে ব্যর্থ হলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ওই কোম্পানির জন্য একটি আলাদা ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে বিএসইসি’র নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে।
এদিকে তালিকাভুক্ত ৪৬ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে কম শেয়ার রয়েছে ইনটেক লিমিটেডের। এ কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ মাত্র ৩.৯৭ শতাংশ। ইনটেক লিমিটেডের পরিচালকদের আরো ২৬.০৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ কোম্পানির মোট ৩ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার ২২৬টি শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ পদ ধরে রাখতে হলে কিংবা শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে ইনটেক লিমিটেডের পরিচালকদের আরো ৮১ লাখ ৫২ হাজার ৯১৫টি শেয়ার কিনতে হবে। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৩৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইনটেক লিমিটেডের পরিচালকদের শেয়ার কেনার পেছনে ব্যয় করতে হবে প্রায় ২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এরপরের অবস্থানেই রয়েছে ফাইন ফুডস লিমিটেড। এ কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ মাত্র ৫.০৯ শতাংশ। ফাইন ফুডস কোম্পানির পরিচালকদের আরো ২৪.৯১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ কোম্পানির মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮টি শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ পদ ধরে রাখতে হলে কিংবা শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে ফাইন ফুডস লিমিটেডকে আরো ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ৯০০টি শেয়ার কিনতে হবে।বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৪২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফাইন ফুডস লিমিটেডের পরিচালকদের শেয়ার কেনার পেছনে ব্যয় করতে হবে প্রায় ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
ফ্যামিলিটেক্স বিডি’র পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ মাত্র ৪.০২ শতাংশ। কোম্পানির পরিচালকদের আরো ২৫.৯৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ কোম্পানির মোট ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৮টি শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ পদ ধরে রাখতে হলে কিংবা শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে ফ্যামিলিটেক্স পরিচালকদের আরো ৯ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার ৮৭০টি শেয়ার কিনতে হবে।বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার কেনার পেছনে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, এ কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার কিনবেনতো দূরের কথা উল্টো শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেছেন। যে কারণে কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে পড়ে রয়েছে। আজ এই খবরে কোম্পানির শেয়ার দর ১০ পয়সা বাড়লেও সামনে এর ভবিষ্যত পুরোই অন্ধকার।
উল্লেখিত কোম্পানি ছাড়াও ইউনাইটে এয়ারওয়েজ(বিডি) লিমিটেড (৪.১৬%), ফু-ওয়াং সিরামিক (৫.৩৩%), ফু-ওয়াং ফুডস (৫.৩৬%), আইএফআইসি ব্যাংক (৮.৩৩%), অগ্নি সিস্টেমস (৯.৩৯%), সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজ (৯.৯৯%), একটিভ ফাইন (১২.০৪%), বেক্সিমকো ফার্মা (১৩.১৯%), ফাস ফাইন্যান্স (১৩.২০%), জেনারেশন নেক্সট (১৩.৮২%), বিজিআইসি (১৪.৮৯%), নর্দার্ন জুট (১৫.২৭%), আলহাজ্ব টেক্সটাইল (১৬.৮১%), মিথুন নিটিং (১৭.২০%), পিপলস ইন্স্যুরেন্স (১৭.৭৯%), ডেল্টা স্পিনার্স (১৮%), বারাকা পাওয়ার (১৮.০১%), মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স (১৮.০৭%), এপেক্স ফুটওয়্যার (১৯.৪২%), বেক্সিমকো লিমিটেড (২০.১৫%), এ্যাপোলো ইষ্পাত কমপ্লেক্স (২০.২৪%), অলিম্পিক এক্সেসরিজ (২০.৬৮%), উত্তরা ব্যাংক (২০.৮৮%), দুলামিয়া কটন (২১.০৪%), ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক (২১.৬২%), সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল (২২.১৪%), সালভো কেমিক্যাল (২২.১৪%), বিডিকম অনলাইন (২৩.১০%), পিপলস লিজিং (২৩.২১%), জাহিন স্পিনিং (২৩.৯৪%), কে অ্যান্ড কিউ (২৪.০৬%), ফার্মা এইডস (২৪.২২%), সেন্ট্রাল ফার্মা (২৫.৮৯%), অলিম্পিক ইন্ডাষ্ট্রিজ (২৭.৭৭%), বিডি থাই (২৮.২৩%), বে-লিজিং (২৮.২৬%), ম্যাকসন স্পিনিং (২৮.৩৭%), আফতাব অটোমোবাইলস (২৮.৪২%), এমারেল্ড অয়েল (২৮.৪২%), স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক (২৮.৫০%), পপুলার লাইফ (২৮.৯২%), তাল্লু স্পিনিং (২৯.০৪%) এবং কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড (২৯.৮৮%) কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে রয়েছে।