সহজে শেয়ারদরে কারসাজি করা যায়—এমন বিতর্ক ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েক বছর আগে শর্ট সেল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের কারণে স্টেকহোল্ডারদের দাবির মুখে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শর্ট সেল বৈধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে একটি খসড়া আইনও তৈরি করেছে তারা। খসড়া আইন অনুসারে, পাঁচটি শর্ত মেনে চুক্তি করে বৈধভাবে শর্ট সেল করা যাবে।

সম্প্রতি বিএসইসি শর্ট সেলের খসড়া আইনটি জনমত জরিপের জন্য প্রকাশ করেছে। ১২ মের মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের এ বিষয়ে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। এ মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, পতনশীল বাজারে স্পেকুলেটিভ ট্রেডিং থেকে মুনাফা করার জন্য শর্ট সেল ব্যবস্থা প্রচলন হয়। নিজের কাছে নেই—এমন সিকিউরিটিজ বেচে দেয়াই হলো শর্ট সেল। দরপতনের পূর্বানুমান থেকেই এটি করা হয়। দাম কমে গেলে একসময় সেটি বাজার থেকে কিনে আসল মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিক্রয়মূল্য থেকে ক্রয়মূল্য, ট্রেডিং কমিশন, মার্জিন ঋণের সুদ, লভ্যাংশ ও রাইট শেয়ার বাদ দিয়ে শর্ট সেলারের মুনাফা হিসাব করা হয়।

‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (শর্ট সেল) রুলস, ২০১৯’ শীর্ষক খসড়া আইনে বলা হয়েছে, শর্ট সেল করতে হলে শেয়ারের প্রকৃত মালিক বা লেন্ডারের সঙ্গে পাঁচটি শর্ত মেনে চুক্তি করবে শেয়ার ধারকারী। এ শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—শেয়ার ধারের সময়সীমা, চার্জ, ফি অথবা মুনাফা নির্ধারণ, ধারের বিপরীতে সমমূল্যের সিকিউরিটিজ (ক্যাশ, ডিপোজিট সার্টিফিকেট, ব্যাংক গ্যারান্টি, লিকুইড ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট, তালিকাভুক্ত শেয়ার ও এক্সচেঞ্জ সিসিপি অনুমোদিত ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট) রাখা, রিটার্নের জন্য সঞ্চিতি ও যেকোনো প্রকার বিতর্ক সালিশির মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ। শর্ট সেলে লোকসান হলে এর ভার ধারকারীকে বহন করতে হবে।

চুক্তি অনুযায়ী মুনাফাসহ সিকিউরিটিজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। আর এ চুক্তির নিশ্চয়তা দেবে স্টক ব্রোকার ও ডিলার। এর জন্য তারা যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে। শর্ট সেল শুধু স্টক ব্রোকার ও ডিলাররা করতে পারবে। এর মধ্যে স্টক ডিলার নিজম্ব হিসাবে আর ব্রোকার গ্রাহকের হিসাবে শর্ট সেল করতে পারবে। আর শর্ট সেলের সব দায়িত্ব স্টক ব্রোকার ও ডিলার পালন করবে। ধারকারী বা বরোয়ার দায় শোধ না করা পর্যন্ত শর্ট সেলের লেনদেন থেকে অব্যাহতি পাবে না। আর ধারকারী বা বরোয়ার চুক্তি অনুযায়ী দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এর দায়িত্ব স্টক ব্রোকারকে নিতে হবে। এর জন্য ব্রোকার বা ডিলার ধারকারীর কাছ থেকে জামানত রেখে দেবে।

খসড়া আইনে আরো বলা হয়েছে, একীভূত অথবা অধিগ্রহণ হবে—এমন কোম্পানি শেয়ার এবং যোগ্য সিকিউরিটিজ নয়—এমন শেয়ার শর্ট সেল করা যাবে না। স্টক এক্সচেঞ্জ বিএসইসির সম্মতি নিয়ে এ বিষয়ে যেকোনো শর্ত আরোপ করতে পারবে। আর স্টক ডিলার ও ব্রোকার এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির নির্দেশ মেনে কাজ করবে।

শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার শর্ট সেল করা যাবে। তবে কমিশনের সম্মতি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারি শেয়ার ও অন্য কোনো ক্যাটাগরির শেয়ারও শর্ট সেলের জন্য বিবেচনা করতে পারবে। সব ব্রোকার লেনদেন শেষে শর্ট সেলের প্রতিবেদন দৈনিক ভিত্তিতে জমা রাখবে। তবে মার্কেট মেকারের ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হবে না।

শর্ট সেলের তথ্য রাখার জন্য কমিশন একটি ছক নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ তথ্য শর্ট সেল হওয়ার পর সাত বছর সংরক্ষণ করা হবে। কমিশন বা এক্সচেঞ্জ চাওয়ামাত্র স্টক ডিলার ও ব্রোকার তথ্য দাখিল করতে বাধ্য থাকবে। তথ্যের নির্ভুলতার গ্যারান্টিও তারা দেবে। এ আইন ভঙ্গ করলে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

Source: Bonikbarta