বিপুল পরিমাণ খেলাপী ঋণ আর আমানতকারীদের টাকা ফেরতে ব্যর্থতার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল)-এর লাইসেন্স বাতিল ও কোম্পানিটির অবসায়ন (Liquidation) এর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সরকারের সম্মতিও মিলেছে। শিগগিরই চুড়ান্ত সম্মতির জন্য হাইকোর্টের আবেদন জানাবে লাইসেন্সদাতা প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীদের পাশাপাশি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদেরকেও বিপুল পরিমাণ লোকসানের কবলে পড়তে হবে। এমনকি হারাতে হতে পারে সম্পূর্ণ বিনিয়োগ। তাদের সম্মিলিত লোকসানের পরিমাণ ৭শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও কোম্পানির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন অনুসারে, আদালত অবসায়নের অনুমতি দিলে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য একজন লিক্যুইডেটর (Liquidator) বা অবসায়ক নিয়োগ করা হবে। এই লিক্যুইডেটর কোম্পানির অবসায়ন (Wind up) এর প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি কোম্পানিটির সম্পদের মূল্য ও দায়-দেনা নিরুপণ করবেন। পরবর্তীতে পাওনা আদায় ও সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে দেনা শোধ করার ব্যবস্থা করবেন।
কিন্তু সম্পদ বিক্রি করার পরও পিপলস লিজিং এর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ভাগ্যে ন্যুনতম এক টাকাও জুটবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কারণ কোম্পানিটির সম্পদের চেয়ে দায় বেশি। এছাড়া কোম্পানি আইন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুসারে সম্পদ বিক্রির টাকা যেভাবে বণ্টন করার কথা তাতেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আইন অনুসারে লিক্যুইডেটরের কাছে কোনো অর্থ এলে সেখান থেকে প্রথমে পরিশোধ করা হবে লিক্যুইডেটরের ফি ও সংশ্লিষ্ট ব্যয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাওনা শোধ করতে হবে। এরপরও কোনো অর্থ থাকলে তা দিয়ে শোধ করতে হবে জামানতসম্পন্ন বা গ্যারান্টেড কোনো ঋণ, ঋণপত্র, বন্ড, ডিবেঞ্চার, প্রেফারেন্স শেয়ার ইত্যাদির গ্রাহকদের পাওনা। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলেই কেবল তা সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন।
পিপলস লিজিং এর সর্বশেষ প্রান্তিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ঋণাত্মক। চলতি বছরের ৩১ মার্চে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (Consolidated NAVPS) ছিল -৬৭ টাকা ৬৬ পয়সা। অর্থাৎ ১০ টাকা দামের প্রতি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটির দায় ৬৭ টাকা ৬৬ পয়সা।
কোম্পানিটির এনএভিপিএস ধনাত্মক না হওয়ায় সম্পদ বিক্রি থেকে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো অর্থ পাওয়ারই সম্ভাবনা নেই। তবে যদি কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য স্থাবরসম্পদের (যদি থেকে থাকে) বর্তমান বাজারমূল্য সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে তাহলে সামান্য সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু শেয়ার প্রতি কোম্পানিটির দায় এত বেশি যে স্থাবর সম্পদের বাজার মূল্য কিছুটা বেশি হলেও তাতে তেমন কিছু যাবে আসবে না।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে পিপলস লিজিং এর শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯৭টি। আর এই শেয়ারের ৬৭ দশমিক ৮৪ ভাগ ধারণ করছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। তাতে এদের ধারণকৃত শেয়ারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৪২ হাজার ৯০১টি। শেয়ারের অভিহিত মূল্য অনুসারে এই শেয়ারের মোট মূল্য ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ দিনের (মঙ্গলবার) বাজার মূল্য ছিল ৬৯৭ কোটি ১১ লাখ। মঙ্গলবার বাজারে দিনভর প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার। আজসহ আগামী দিনগুলোতেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর যদি কিছু শেয়ার বিক্রি বা হাত বদলও হয়, তাতেও লোকসানের অংকটি একটু ভাগাভাগি হবে মাত্র। মোট লোকসান একই থেকে যাবে। এ হিসেবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মোট লোকসান হতে পারে প্রায় ৭শ কোটি টাকা।