দু-দিনের ইতিবাচক প্রবণতার পর আজ চালাক চতুর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তোলায় সূচকে কারেকশন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে কিছু বিনিয়োগকারী আছে যারা ডে ট্রেডিং করতে চায়। তারা একটু প্রফিট হলেই শেয়ার বিক্রি করে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসে এবং দর কমলে আবার বিনিয়োগ করে, যা মাঝে মাঝে সূচক পতনের গতি বাড়ায়। তবে বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে এমন আচরণ স্বভাবিক নয়। কারণ এখন যে অবস্থায় আছে তার থেকে বাজার সামনে যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। আর না যাওয়ার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরণের অভাব। পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ক্যপিটালেও ঘাটতি আছে। যদিও তারল্য সংকট কাটাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে। তবে এটি পুরোপুরি কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। কেননা নতুন বিও খোলাসহ বেশকিছু বিষয় ঠিক রেখে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে পুঁজিবাজারে। আর এটা হয়ে গেলেই পুঁজিবাজার কাঙ্খিত গতি ফিরে পাবে। কাজেই বাজারের স্বার্থে কিছু প্রফিট হলেই তা সংগ্রহ করার মানসিকতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বেরিয়ে আসা দরকার। কারণ পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী একে ব্যবসা মনে করে। আসলে পুঁজিবাজার ব্যবসার জায়গা নয়। আজ বিনিয়োগ করবেন কাল বিক্রি করে লাভবান হবেন, প্রতি সপ্তাহে লাভবান হবেন। বিষয়টি এ রকম নয়। শুধু ব্যবসার চিন্তা করলে হবে না। কারণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থ দিয়েই বাজার মূলধন সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সচেতন হতে হবে। যখন বাজার খারাপ অবস্থানে থাকে, তখন স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরই ভূমিকা থাকার কথা। কিন্তু তাদের সে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না বলেও মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তবে কেউ কেউ বলছেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য পুঁজিবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থনীতির উন্নয়নে এটি আশার জায়গা। কিন্তু এখন এটি নিরাশার জায়গায় পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাজার এখন আর বাজার নেই। বাজারে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। যদিও তারল্য সংকট কাটাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আস্থার সংকট। বাজার ভালো করতে হলে দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি আনতে হবে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিশেষ করে আইসিবি, ব্যাংক, বিমা এবং মিউচুয়াল ফান্ড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর বিনিয়োগকারীদের বোকা ভাবলে চলবে না। তারা আগের চেয়ে এখন বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন। বাজারে এখনও কারসাজি চলছে। জেড ক্যাটেগরির শেয়ারদর প্রায়ই বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এটা বুঝেন।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৯৫৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৪৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭৭৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ২১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪০৫ কোটি ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫০০০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৭৮৯ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৫১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১১১ কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৮৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫০টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮১টির, কমেছে ১৫৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজারের সূচককে প্রধান হিসেবে বিবেচনা না করে কোম্পানির পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ ভালো কোম্পানিও অনেক সময় অতি মূল্যায়িত হয়ে যেতে পারে যদি কোম্পানির আয়ের তুলনায় শেয়ারের দাম বেশি হয়ে যায়। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লোকসানের আশঙ্কা কম থাকে। তবে বর্তমানে কিছু ‘জেড’ ক্যাটাগরির মন্দ কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। অন্যথায় লোকসানের পড়তে হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন ওই বিশ্লেষকরা।