অব্যাহত দরপতনের খপ্পর থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। পাশাপাশি চাঙা করতে বহুমুখী প্রচেষ্টার পরও লেনদেনের খরাও কাটছে না। প্রতিনিয়ত দরপতনের কবলে পড়ে পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এতে দিশেহারা বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বেড়েই চলছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর ব্যথা যেমন সইতে পারছে না, তেমনি পুঁজি রক্ষার উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলে নীরবেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাদের। কোনো কিছুতেই সেই ক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু ছাড় দিলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। উল্টো পতনের বাজারে লেনদেন খরা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মূলত তারল্য সংকট ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি সূচক পতনের গতি বাড়িয়েছে। দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ না বাড়ানোর কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কিনছেন না। কাজেই পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে বড় ও ভালো বিনিয়োগ জরুরি। ভালো শেয়ার বা বড় শেয়ার নতুন করে এলে সূচক বাড়বে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সূচক দেখেই শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে সূচক বাড়াটা গুরুত্বপুর্ণ। আর সূচক বাড়লে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ে। তখন লোকজন ভালো শেয়ারের পাশাপাশি অন্য শেয়ারও কিনবে বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।
এদিকে, সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতন ঘটেছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৪ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিনই কমেছে সূচক। পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরও। আর টাকার অংকেও গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমান কিছুটা কমেছে। সপ্তাহ শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ২.৫৮ শতাংশ বা ১২৭.৬০ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই-৩০ কমেছে ২.৮৯ শতাংশ বা ৫০.৭০ পয়েন্ট। অপরদিকে শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক কমেছে ২.২০ শতাংশ বা ২৫.০১ পয়েন্ট। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৫৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬টির কোম্পানির। আর দর কমেছে ৩০৫টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির এবং লেনদেন হয়নি ২টির। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন মোট ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৩০৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। তবে এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ৯৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০৮ টাকার। সেই হিসাবে সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৬৮২ কোটি ৮১ হাজার ২০৫ টাকা বা ৩৪.৮২ শতাংশ।
আর সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮১.৬৩ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ১২.৪৩ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৪.৩৭ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে ১.৫৬ শতাংশ।
অন্যদিকে, সপ্তাহশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ২২২ পয়েন্ট বা ২.৪৩ শতাংশ কমে সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯০০ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে হাতবদল হওয়ার ৩০০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৫টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২৪৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টির। এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ৫২ কোটি ৯৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৫ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।