বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার পরের দিন থেকেই পুঁজিবাজারে বড় ধরনের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে।এভাবে টানা পতন ২০১৯ সালে আর কখনই হয়নি। বাজারের এ অবস্থা দেখে অনেক বিনিয়োগকারী প্রশ্ন করছেন, তাহলে ডিএসই কি এমন কিছু হতে যাচ্ছে তা জানতো?আর জেনে শুনেই কি আগাম ব্যাবস্থা হিসাবে যাতে কোথাও থেকে কোনো প্রতিবাদ না আসে সে জন্যই থানায় জিডি করেছে?ওই বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বাজার পরিকল্পনা করেই ফেলানো হচ্ছে।বড় কোনো গ্রুপকে সুবিধা দেয়ার জন্য।কেউ কেউ মনে করছেন, যারা এ কাজগুলো করছে তাদের কাছে খোদ এসইসিও পাত্তা পাচ্ছেনা। কারন বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য সংস্থাটির অন্তরিকতার অভাব নেই তা তারা মনে করছেন। কিন্তু তারপরও এভাবে টানা পতনে কেনো থাকছে বাজার তার কোনো সদুত্তর কেউই দিতে পারছেনা। বিশেষ করে আজকের ৭৬ পয়েন্টের পতনে অনেক বিনিয়োগকারীই বাজারে থাকা না থাকার ব্যাপারে ভাবনায় পড়ে গেছেন। তাদের পোর্টফোলিও এমন অবস্থায় পৌছেছে যেখান থেকে উঠে আসা প্রায় অসম্ভব। কারন আজকের পতনের ফলে বাজার চলে গেছে প্রায় ৩ বছর পেছনে।তারা মনে করছেন আবার সামনের তিন বছর বাজার বাড়লে তারা তাদের মুলধন ফিরে পাবেন।আর সেটা যে সদূর পরাহত তা সবারই জানা।
বাজার বিশ্লেষণে বলা যায়, আজ বুধবার ব্যাপক পতন হয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই।এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৭৬ পয়েন্ট কমে ২ বছর সাড়ে আট মাস আগের অবস্থানে নেমে গেছে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব সূচকও কমেছে ব্যাপক হরে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে এদিন সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমলেও ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স ৭৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৩৩ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি ২ বছর ৮ মাস ২০ দিন বা ৬৬৭ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। এর আগে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স সূচক আজকের থেকে কম স্থানে অবস্থান করছিল। ওই দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। আজ ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৫৫ ও ১৭৩৬ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ ৫০২ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪০৭ কোটি ৩ লাখ টাকার। অর্থাৎ আজ ডিএসইতে লেনদেন ৯৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বেশি হয়েছে।
ডিএসইতে আজ ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টির বা ১০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৮৮টির বা ৮২ শতাংশের এবং ২৮টি বা ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের। এদিন কোম্পানিটির ২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা জেএমআই সিরিঞ্জের ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার এবং ২৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে বিকন ফার্মা।
ডিএসইর টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : মুন্নু সিরামিক, স্টাইলক্রাফট, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, ওয়াটা কেমিক্যাল, আইপিডিসি এবং স্কয়ার ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২৩৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৩ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ২০৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির দর। আজ ১৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
ধন্যবাদ