বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য ‘চমক থাকবে’- সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমন আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, সংশ্নিষ্টদের চাওয়ার তুলনায় বেশি কিছু বাজেটে থাকবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান আরও জানান, শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের সংকট কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ারবাজার বিনিয়োগ এক্সপোজার গণনায় সংস্কার এনেছে।

এদিকে, তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির সম্মিলিতি শেয়ার ৩০ শতাংশের কম এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের ব্যক্তিগত শেয়ার ২ শতাংশের কম, সেসব কোম্পানির বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের হার ৩০ শতাংশের কম, সেগুলো কেবল রাইট শেয়ার ঘোষণা নয়, ভবিষ্যতে বোনাস লভ্যাংশও ঘোষণা করতে পারবে না। একই সঙ্গে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারকে নন-মার্জিন (মার্জিন প্রদানে অযোগ্য) ঘোষণা করা হবে। তাছাড়া কোনো বিনিয়োগকারীর এমন কোম্পানিতে ২ শতাংশ বা এর বেশি শেয়ার থাকবে, তারা যাতে পরিচালক হতে পারেন তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিধান করার কথা জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক স্টেকহোল্ডার প্রতিনিধি সমকালকে এসব কথা জানান। বৈঠকে অংশ নেন ডিএসই ও সিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ, ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর সংগঠনের প্রতিনিধিরা। লাগাতার দরপতনের প্রেক্ষাপটে গত ২৯ এপ্রিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার ডাকা জরুরি বৈঠকে বেশকিছু আইনি সংস্কারের ঘোষণা এসেছিল। এগুলোর বাস্তবায়নে বিএসইসি ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করা হয়েছে। 

গত ২৯ এপ্রিলের বৈঠকে কমিশন ঘোষণা দিয়েছিল, এখন থেকে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিকে বিএসইসির অনুমতি নিতে হবে না। তবে এমন কোনো কোম্পানি পরবর্তীকালে আইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন সংগ্রহ করতে চাইলে আইপিও-পূর্ব সব শেয়ারের ওপর লক-ইন তিন বছর হবে। একইসঙ্গে আইপিও-পূর্ব মূলধন উত্তোলনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি-না, তা যাচাই-বাছাই করা হবে।

এছাড়া ওই সভায় আইপিও প্রক্রিয়ায় কোনো মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে নূ্যনতম মূলধন সংগ্রহের সীমা বাড়ানো হবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে শেয়ারদর নির্ধারণে ডাচ্‌ অকশন পদ্ধতি ব্যবহার হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কোটা ৬০ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে। তাছাড়া সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে নিষ্ফ্ক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিও শেয়ার ক্রয়ে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করতে চাইলে ঘোষণার সময়ই বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে। এছাড়া যেসব কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ বা উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেগুলোকে চিহ্নিত করতে নতুন একটি ক্যাটাগরি করা হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, গতকাল কমিশন এ বিষয়গুলো আইনি রূপ দিতে ইতিমধ্যে বিদ্যমান বিধিমালায় সংশোধন আনার সুপারিশ পেতে একাধিক কমিটি করেছে বলে উল্লেখ করে। কমিটিগুলো শিগগির তাদের সুপারিশ জমা দেবে। ওই প্রতিবেদন পেলে আইনি বিধানাবলি সংশোধনে খসড়া প্রস্তুত করবে কমিশন। জনমত জরিপ বিশ্নেষণ শেষে প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন সাপেক্ষে সেটির গেজেট প্রকাশ করা হবে।