সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেডের এইচএসডিভিত্তিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু হওয়ার পর বিপিডিবির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ক্যাপাসিটি টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার চার মাস পরে বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের প্রায় ৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে।
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব মো. রবিউল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সিরাজগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ শেষে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। নিয়মানুসারে বিপিডিবির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সক্ষমতা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর ক্যাপাসিটি টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই বিপিডিবির পক্ষ থেকে গত ২৫ জুন চিঠির মাধ্যমে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর অনুমোদন দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের পর্ষদ পিপিভি কনসোর্টিয়ামের নামে ২০০ মেগাওয়াটের এইচএসডি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তী কনসোর্টিয়ামের অংশীদার হয়ে প্যারামাউন্ট অ্যাক্রন এনার্জি নাম ধারণ করে। কিন্তু পরে অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ কনসোর্টিয়াম থেকে সরে গেলে শেষ পর্যন্ত বাংলা ট্র্যাক লিমিটেডের সঙ্গে প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি লিমিটেড নামে কনসোর্টিয়াম গঠন করে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।
গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিজেলভিত্তিক প্লান্ট স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপিডিবির কাছ থেকে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পাওয়ার কথা জানায় প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি লিমিটেড। সরকারের সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য বিদ্যুৎ বিক্রয়ের চুক্তি করেছে কোম্পানিটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ৪৯ শতাংশ এবং বাংলা ট্র্যাক লিমিটেডের ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বাংলা ট্র্যাক লিড মেম্বার হিসেবে কাজ করবে।
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের চলতি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ৪২৩ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে। আর এ সময়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি থেকে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা আয় হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১২ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ২৩ পয়সা।
এদিকে গেল ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বিএমআরইর মাধ্যমে কারখানা সম্প্রসারণ ও নতুন প্রিন্টিং ইউনিট চালুর সুবাদে ভালো ব্যবসা করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বার্ষিক বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। আর বিক্রি বাড়ার সুবাদে কোম্পানিটির বার্ষিক নিট মুনাফায় ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ৭ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের পর্ষদ। সমাপ্ত হিসাব বছরে এর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ২০ টাকা ৭৮ পয়সা। এর আগে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। সে বছর এর ইপিএস ছিল ১ টাকা ৯২ পয়সা।
ডিএসইতে গতকাল সর্বশেষ প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার ৬১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ৫০ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ দর ৭৫ টাকা।
২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। রিজার্ভ ৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। মোট শেয়ার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৯; যার ৬০ দশমিক ৭৫ শতাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১০ দশমিক ৩৮, বিদেশী ৩ দশমিক ৪৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে বাকি ২৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ২৯ দশমিক ৮০, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ২১ দশমিক ৬২।