বাজারের মন্দাবস্থা কাটাতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট (RIU) বা বোনাস ইউনিট দেওয়ার নিয়ম চালু করা হলেও এই ইস্যুটি বর্তমানে বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে তাদের ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দিয়ে শুধু রি-ইনভেস্টমেন্ট প্রদান করে দিনের পর বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা ক্যাশ ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এ খাতে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। যে কারণে পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে খ্যাত মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ খাতে লভ্যাংশ আকারে আরআইইউ (প্রচলিত অর্থে বোনাস) প্রদান করার আইন বাতিল করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া ফান্ডগুলোর বাজার দর কম হওয়ায় ফান্ডগুলো যে হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, প্রকৃত বিনিয়োগের তুলনায় লভ্যাংশ আয়ের হার বেশি ও আকর্ষণীয় হবে- এমন বিধান রেখে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইন সংশোধন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংশোধন করে অ্যাসেট ম্যানেজারদের ডিভিডেন্ড হিসেবে রি-ইনভেষ্টমেন্ট ইউনিট বা বোনাস ইউনিট দেওয়ার পর থেকে অ্যাসেট ম্যানেজারদের রি-ইনভেষ্টমেন্ট ইউনিট (আরআইইউ) প্রদানের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু তাদের এই বোনাস ইউনিট দেওয়ার ফলে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ধরা যাক, ২০০ কোটি টাকার কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠন করা হলো। গঠিত এ ফান্ডের ১% কমিশন হিসেবে ২ কোটি টাকা কমিশন পাচ্ছেন সম্পদ ব্যবস্থাপক। যদি এই ২০ কোটি ইউনিটের বিপরীতে ১০ শতাংশ রি-ইনভেষ্টমেন্ট ইউনিট দেয়া হয় তাহলে মোট ইউনিটের সংখ্যা আরো ২ কোটি বেড়ে দাঁড়ায় ২২ কোটি ইউনিটে। এখন এই ২২ কোটি ইউনিটের বিপরীতে ১% কমিশন নিচ্ছেন সম্পদ ব্যবস্থাপকরা। অর্থাৎ যত বোনাস ইউনিট দেবে অ্যাসেট ম্যানেজারদের কমিশন তত বৃদ্ধি পাবে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রি-ইনভেস্ট ইউনিট চালু করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্যাশ ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১০ টাকায় ইউনিট কিনেও ফেসভ্যালু ও নেট অ্যাসেট ভ্যালুর (ন্যাভ) নিচে বাজার দর অবস্থান করছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড এর প্রতি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট হলেই এর দাম ন্যাভ (Net Asset Value) এর উপরে থাকবে। আর বিনিয়োগকারীকে ভাল লভ্যাংশ প্রদান ব্যাতিরেকে তা সম্ভব নয়। আর বাজার মূল্য ন্যাভ এর নিচে থাকলে কেউই স্পন্সর হিসাবে নতুন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের স্পন্সর হিসাবে বিনিয়োগ করবে না সেটাই স্বাভাবিক। তাই বেশি কমিশন পাবার আশায় রি-ইনভেষ্টমেন্ট ইউনিটের নামে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে যাচ্ছে সম্পদ ব্যবস্থাপকরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যেকোন দেশের পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারকে শক্তিশালী করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সাধারণ বিনিয়োগকারী, পেনশন হোল্ডারস, গৃহিনী যারা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার চেয়ে পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার কর্তৃক পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে বছর শেষে ভাল লভ্যাংশ পায়। কিন্তু ঠিক বিপরীত অবস্থানে রয়েছে এদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অবস্থা। মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারকে কোনভাবেই প্রভাবিত করতে পারছে না। সামগ্রিক বাজার মূলধন, লেনদেনে এর অংশ খুবই কম। বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগকারীদের তীব্র আস্থা সংকট চলছে। তাই মিউচ্যুয়াল ফান্ড, নেট অ্যাসেট ভ্যালুর অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজারকে শক্তিশালী করতে হলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে এ সংক্রান্ত বিধিমালা পুনরায় সংশোধন করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট বাতিল করে এ খাতকে আকর্ষণীয় করতে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।