পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরও তুলনামূলক বড় পতন হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। ননলিস্টেড কোম্পানির যে শেয়ার ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর কাছে রয়েছে, তা পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা (এক্সপোজার) হিসেবে গণ্য হয়। যদিও এটি স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেড হয় না। তাই এটি ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি বাদ দেয়া হলে বিনিয়োগসীমা বাড়বে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি মূলধন বাড়ানোর জন্য বন্ড ছেড়েছে। এটি ব্যাংকগুলোই কিনবে। এটি এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে আসবে না। আর ব্যাংকগুলো বন্ড কিনলে ওই টাকা আইসিবি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। ২০০ কোটি টাকা বন্ডের অফার রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসা এমন ঘোষণার ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এমনটাই ভেবেছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। অর্থাৎ বৃদ্ধির বদলে উল্টো দুই বাজারেই সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বাজারের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। এতে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে আসছে না। যার প্রতিফলনে সূচক, টার্নওভার, বাজার মূলধন এবং প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যাচ্ছে। আসলে এ সিদ্ধান্তগুলো আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। শুধু তারল্য সংকটে বাজারে এ অবস্থা তা কিন্তু নয়। বাজারের এ অবস্থার জন্য আরও অনেক কারণ রয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে ভরসা পাচ্ছে না। যার ফলে বাজার দীর্ঘস্থায়ীভাবে গতিশীল হচ্ছে না বলেও মনে করছেন তারা।

তারা আরও বলছেন, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে অনেক কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের ৩০টি কোম্পানি লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ব্যাংকের লভ্যাংশ আগের বছরের চেয়ে কমেছে, ছয়টি ব্যাংকের লভ্যাংশ গ্রোথ বেড়েছে, দুটি ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ দেয়নি এবং বাকি ব্যাংকগুলো আগের মতোই লভ্যাংশ দিয়েছে। আমরা বাজারে আস্থার কথা বলি, বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতার কথা বলি, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং ব্যবসা বাণিজ্য ভালো। এসব পরিসংখ্যানের মাঝে দেখা যাচ্ছে অনেক কোম্পানি প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আবার অনেক কোম্পানি বছরের পর বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে। এবার ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। শুধু যে ব্যাংক বোনাস শেয়ার দিচ্ছে তা নয়, আরও বিভিন্ন কোম্পানি বোনাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে। যা বাজারকে কিছুটা কুলসিত করছে। কাজেই বাজার ভালো করতে হলে সবাইকে সুশাসন তথা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান পতন থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। সোমবার সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫২৪৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২১০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮৩৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৭টির, কমেছে ২১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩০৫ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫২৭৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২১৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮৪৬ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫৮ কোটি ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৩ কোটি ১৩ লাখ ৪ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭২১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২২০টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ১৪৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।