ব্যবসা পরিচালনায় নানামুখী সমস্যায় থাকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড উৎপাদন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত কারখানায় উৎপাদন গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। তবে উৎপাদন চালু হওয়া মাত্রই তা জানানো হবে বলে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত কারখানায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে কোম্পানিটি। সিইপিজেডের ৪৩-৪৬ নং প্লটের, ৪ নং সেক্টরর এ কারখানাটিই ছিল কোম্পানি প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যানুসারে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মুনাফার ধারায় ছিল কোম্পানিটি। পরবর্তীতে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়নে গঠিত অ্যাকর্ডের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ পায় না। ফলে মিথুন নিটিংয়ের পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে যায়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কোম্পানির ব্যবসায়। তবে বিকল্প হিসেবে অ্যাকর্ড জোটের বাইরে রফতানির মাধ্যমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি। ব্যবসা টিকেয়ে রাখলেও কোম্পানিটি নগদ অর্থ সংকটে পড়েছে। এরই ধারবাহিকতায় আগের হিসাব বছরের ন্যায় ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে বড় ধরনের লোকসানে রয়েছে মিথুন নিটিং।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৫৯ পয়সা। আর ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যবসা করে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ১ টাকা ২৩ পয়সা। যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩৫ পয়সা। কোম্পানিটির পরিচালন নগদ প্রবাহের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১ টাকা ৮ পয়সা। অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ায়ই মূলত নগদ টাকার সংকটের প্রমাণ দেয়। যে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো যত বেশি ঋণাত্মক, ওই প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ সংকট তত বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি প্রতিষ্ঠানের অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবসা পরিচালনায় নানামুখী সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো পাওনা পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। শুধু ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে নয়, আগের বছরেও এ প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৩৫ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির নগদ অর্থ সংকটের পরিমাণ আরও বেড়েছে। লোকসান ও ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য আগের বছরের তুলনায় কমেছে। ২০১৯ সালের মার্চ শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৫২ পয়সা, যা ২০১৮ সালের জুন শেষে ছিল ১৯ টাকা ৭৫ পয়সা।