Decision Maker

ব্যাংক খাতের নেতৃত্ব: হারানো স্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু

মহাধসের পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোয় ব্যাংক খাতের প্রভাব কমতে কমতে তলানীতে পৌঁছায়। অথচ এ খাতের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে দীর্ঘ খরার পর হারানো স্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে ব্যাংক খাত। চলতি মাস থেকে এ খাতের থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ। এরই অংশহিসেবে তলানিতে থাকা বাজারের মোট লেনদেনের বড় অংশজুড়েই রয়েছে ব্যাংক খাতের দখলে। আর এতে গত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে খাতটি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক কোম্পানিগুলো ২০১৬ সালে ভালো মুনাফা করেছে। এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এর মধ্যে প্রায় সবকটিই সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। আর তলানিতে থাকা ব্যাংক খাতের লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। একটি বড় খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম এবং লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

তবে কেউ কেউ বলছেন, কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক খাত চরম দুরবস্থার মধ্যে থাকলেও এখনও দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বড় অবদান রয়েছে। ব্যাংকের ওপর এখনও সূচকের ওঠা-নামার বড় অংশই নির্ভর করে। ব্যাংক কোম্পানিগুলো ভালো পারফরমেন্স করলে সার্বিক পুঁজিবাজারের ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর বর্তমান বাজার পরিস্থিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে ধরনের সংস্কার করেছে, তাতে পুঁজিবাজার আগামীতে অগ্রসর হতে বাধ্য।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে ব্যাংকিং খাতে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা যা মোট লেনদেনের ২২ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে ব্যাংক খাতের দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল ৫৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা যা মোট লেনদেনের ২০ শতাংশ ছিল। এর আগের সপ্তাহেও ব্যাংকিং খাতে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল ৪০ কোটি ২৭ লাখ টাকা যা ডিএসইতে হওয়া মোট লেনদেনের ১০ শতাংশ। কাজেই গত তিন সপ্তাহ যাবৎ ধারবাহিকভাবে ডিএসইতে ব্যাংক খাতের অবদান বাড়ছে।

এদিকে, দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে ১০ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের আমানত হচ্ছে ৮ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। সরকারি খাতের মোট আমানত হচ্ছে ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি আমানত ৬৭ হাজার ৫৭৬ লাখ কোটি টাকা এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার আমানত এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

জানা যায়, মোট আমানতের মধ্যে সরকারি আমানতের পরিমাণ খুবই কম। ফলে এই আমানত ঋণের সুদের হারে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। এ কারণে সরকারি খাতের আমানত প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের বৈদেশিক তহবিল টাকায় রূপান্তর করে ব্যাংকে আমানত হিসাবে রাখা হবে। অন্য আরও যেসব তহবিল থাকে, সবই ব্যাংকে রাখা হবে। এতে টাকার প্রবাহ ব্যাংকমুখী হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ মানি হিসেবে যেসব অর্থ নিজেদের কাছে রাখে, তা থেকেও কিছু অর্থ বাজারে ছাড়া যাবে। সব মিলে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়বে। আর এসব আমানত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ নোটিশ আমানত, সঞ্চয়ী হিসাব, স্থায়ী আমানত হিসাবে জমা রাখা হবে। যা ব্যাংকগুলোর আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে এখাত সংশ্লিষ্টরা।

Exit mobile version