টানা পতনের রেশ কাটিয়ে সম্প্রতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে পুঁজিবাজার। সূচকসহ বাড়ছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি, ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১০৮ পয়েন্ট। তবে এমন বড় উত্থানেও স্বস্তিতে নেই বিনিয়োগকারীরা। ব্রোকারেজ হাউজে ফিরলেও তারা বাজারের ধারাবাহিকতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন।
তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবেÑএমন প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বাজারে ফিরেও স্বস্তি মিলছে না। সম্প্রতি লেনদেন কিছুটা সন্তোষজনক হলেও এটা কৃত্রিম কি না, এই বিষয়টি তাদের ভাবাচ্ছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তারা। ভুক্তভোগীরা বলেন, হঠাৎ আলোর ঝিলিক নয়, আমরা পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা দেখতে চাই, সাম্প্রতিক বাজারচিত্রে যা একেবারেই নেই বললেই চলে।
লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, তিন কার্যদিবস আগে ডিএসইর প্রধান সূচকের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। গতকাল স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে সূচক বেড়েছে ২১৯ পয়েন্ট। মূলত সম্প্রতি পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বিতর্কিত আইপিও-পূর্ব প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু (ক্যাপিটাল রেইজিং) আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং আইপিও-পূর্ব সব শেয়ারে তিন বছর লক-ইন (বিক্রয় অযোগ্য) রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে পুঁজিবাজারের এমন অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া আইপিওতে ফিক্সড প্রাইস মেথডে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা ও বুক বিল্ডিং মেথডে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা পুঁজিবাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করতে ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে বড় পতন থামার পর বদলে গেছে ব্রোকারেজ হাউজের চিত্র। কয়েক দিন আগের হাউজগুলোতে ছিল সুনসান নীরবতা। গতকাল হাউজগুলোতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে।
মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ায় বাজারের চেহারা বদলে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল ভালো। কিছুদিন আগে বেশিরভাগ হাউজে এমনটি দেখা যেত না। এসব হাউজের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে আসায় তারাও পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি হবে কি না, তা নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন তারা।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজে ফিরলেও তাদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা কাজ করছে। তারা জানান, পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ালেও তা স্থিতিশীল হবে কি না, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার চান। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়। তারা সক্রিয় থাকলে বাজার আরও ভালো হবে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট ও শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসছেন, এটা পুঁজিবাজারের জন্য শুভ লক্ষণ। একই সঙ্গে এটি আমাদের জন্যও ভালো খবর। কারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন না করলে আমাদের আয় কমে যায়। তখন আমাদের ব্যবসা চালাতেও হিমশিম খেতে হয়।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা লেনদেন না করলে আমাদের ব্যবসা চালিয়ে নিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়। সে সময় আমরা বাধ্য হয়েই কর্মী ছাঁটাই করি। তিনি বলেন, একসময় আমাদের হাউজে লেনদেন হতো ১০০ কোটি টাকা। পরে তা অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। এখন বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে। আশা করছি আমাদেরও সুদিন ফিরে আসবে। তবে এর জন্য দরকার ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা।