সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের অস্থির প্রবণতায় শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরু থেকে অস্থিরতা বিরাজ করে সূচকে। তবে আজ লেনদেন সামান্য বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার সৃষ্টিকারী হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে সহয়তা তহবিলের ৭৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রকদের পক্ষ থেকে নানাবিধ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমনকি পুঁজিবাজার সম্প্রসারণে বাজাটে প্রনোদণা দেয়ারও আশ্বাস পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ ফেরাতেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কাজেই বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি কিছুটা হবে এমনটা স্বাভাবিক। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আমাদের বাজার বর্তমানে কিছুটা ছন্নছাড়া। যাতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

তারা আরও বলছেন, গত কয়েক মাসে পুঁজিবাজারের জন্য খারাপ কোনো ঘটনা ঘটেনি। উল্টো ভালো কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। এতে পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গণও শান্ত। কিন্তু তাতেও জেন আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে অস্বাভাবিক আচরণ করছে সূচক। যদিও এর আগে বড় দরপতনের সময় আইসিবিসহ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগ বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা গেছে। তবে বর্তমানে বড় দরপতন ঠেকানোর কোনো চেষ্টা দেখা যায় না। বরং কিছু ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ে। এতে সাধারণ শেয়ারের পাশাপাশি আলোচিত প্রায় সব শেয়ারের দর কমে। যা বিনিয়োগকারীদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কাজেই বিনিয়োগকারীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে আইসিবিকে আজকের মত যথাযথ ভূমিকা পালন করার প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.০০৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫২৫০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৯২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮৩২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১৬৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫২৫০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৯৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৮৩০ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ২৯০ কোটি ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭০৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৪টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৫টির, কমেছে ১১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলেছেন, উন্নত দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটু ইতিবাচক কথা বললে বাজারের উন্নতি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ে না। সরকারকে একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই। উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি বলে দেশের অর্থনীতিতে দশমিক ০০১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তাহলেই পুঁজিবাজার অনেক ওপরে উঠে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টোটি ঘটে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন একজন প্রকৃত বিনিয়োগকারীকে প্রথমে ভালো কোম্পানি বাছাই করতে হবে। ভালো কোম্পানি মানে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, যার আর্থিক বিবরণীর তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্বাস করা যায়। পাশাপাশি বর্তমান প্রবৃদ্ধি ভালো ও ভবিষ্যতে ভালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে এদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে। কাজেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কে আছে, তার অডিটর কে এবং কোম্পানিটি যে খাতে আছে সে খাতের বর্তমান অবস্থা এবং সামনে কতটুকু অগ্রগতি হবে। বাজারে অন্য শেয়ারের তুলনায় ওই শেয়ারটি কম দামে বা অনেক দিন ধরে একটা দামে বিক্রি হচ্ছে কি না। এভাবে মনস্থির করে শেয়ার কেনার পরে যদি দাম কমেও যায় তাহলেও নার্ভাস’ হওয়ার কিছু নেই। কারণ ওই শেয়ারের দাম বৃদ্ধি ও কোম্পানির ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থেকেই প্রফিট করা সম্ভব। কাজেই পুঁজিবাজারে ঝুঁকি থাকলেও সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করে ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি লাভ করা যায় বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।

Source: pujibazar.com