বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে। চলতি বছরের শুরুতেই তা আরও বাড়তে থাকে। একযোগে কমতে শুরু করে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর। যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ প্রায় সবাই বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে লেনদেনও তলানিতে নেমে এসেছে। তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ধরে রেখেছেন প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা। লেনদেনের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ আরও বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ২৪০ জন বিনিয়োগকারী। গত দুই বছরে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার। আগের দুই বছর অর্থাৎ এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হলে তাদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এজন্য বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি ভালোমানের কোম্পানির তালিকাভুক্তি জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
তাদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ার কারণে তারা ব্যাংক ছেড়ে পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকেছেন। তারা কেউই ব্যাংকে টাকা রাখতে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে এখন বেশিরভাগ শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য। যে কারণে পুঁজিবাজারে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বাজারে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়লে তাদের সংখ্যা আরও বাড়বে।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসীর অংশগ্রহণ সব সময় পুঁজিবাজারকে আরও গতিময় করে তোলে। সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কী কিংবা এর সম্ভাবনা কতটুকু তা প্রবাসীদের জানানো। তারা বাজার পরিস্থিতি জানতে পারলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’ পাশাপাশি ভালো শেয়ারের জোগান বাড়লে তাদের অংশগ্রহণও বাড়বে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, ‘তাদের পুঁজিবাজারে আনার জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। তারা সবসময় পুঁজিবাজারের খবর রাখেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দেশি কিংবা প্রবাসী সবাই ব্যবসা করার জন্য পুঁজিবাজারে আসেন। তাই তারা যখন বুঝবেন পুঁজিবাজারে আসা দরকার তখনই তারা এর সঙ্গে যুক্ত হবেন।’
এদিকে গত এপ্রিল মাসে বিদেশিদের লেনদেন কিছুটা কমলেও চলতি মাসে এর পরিমাণ আরও বেড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি মাসের প্রথমপক্ষে প্রবাসীরা লেনদেন করেছেন ২৬৬ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এর আগের পক্ষে যার পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি টাকা। এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি বাড়িয়েছেন। আলোচ্য মাসে কেনার চেয়ে ১৫৪ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন তারা। এ মাসে প্রবাসীদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার বিক্রয় করা হয়েছে ৪১১ কোটি টাকার। এর বিপরীতে শেয়ার কিনেছেন ২৫৭ কোটি টাকার।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে বাজার ভালো অবস্থায় থাকায় জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ৬১১ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন এবং বিক্রি করেছেন ৪২৫ কোটি টাকার। ওই মাসে বিদেশিরা ১৮৬ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনেছেন। তার পরের মাস ফেব্রুয়ারিতেও বিক্রির চেয়ে ২৩৮ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনেছেন। ওই মাসে মোট ৪৩৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন এবং বিক্রি করেছেন ১৯৭ কোটি টাকার। কিন্তু এরপর থেকে বাজার খারাপ হওয়ায় তাদের সেল প্রেসার বেড়েছে।