অব্যাহত দর পতনের প্রতিবাদে আগামীকাল (১৫ অক্টোবর) বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। আগামীকাল সকাল ১১টায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে আয়োজিত এ বিক্ষোভ থেকে আইসিবি (ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন তারা। তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও (বিএসইসি) ঘোরাও করবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ.কে.এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, টানা পতনে পুঁজি হারিয়ে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। আর এই সর্বহারা বিনিয়োগকারীদের দমিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টমহল ফায়দা হাসিলের জন্য জিডি করেছে। যাতে বিনিয়োগকারীদের রক্তরক্ষণেও কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে না পারে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া টানা পতনে আজ বিনিয়োগকারীর মৃত প্রায়। তাদের পোর্টফোলিও’র অবস্থা খুবই নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। যারা মার্জিন ঋণে ব্যবসা করেছেন তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। নিজেদের পুঁজিতো শেষই তারওপর হাউজ উল্টো টাকা পাবে। যদি মার্কেট ভালো না হয় তাহলে পুঁজিবাজারে আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হবে। তাই বাজারকে টেনে তুলতে সরকারের কাছে দাবি জানাতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যতদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যথাযথ দায়িত্ব পালন না করবেন ততদিন বাজারের এ বেহাল দশা কাটবে না। বিএসইসি চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন, কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী এবং ডিএসই ভারপ্রাপ্ত এমডি মতিন পাটোয়ারিরা বিনিয়োগকারীদের দমিয়ে রাখতে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা বিনিয়োগকারীরা প্রতিহত করবে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক জানান, টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হলেও নীতি নির্ধারণী মহল দৃশ্যত কোন দায়িত্ব পালন করছে না। বিনিয়োগকারীরা ডিএসই’র সামনে প্রতিবাদ জানালে ডিএসই কর্তৃপক্ষ থানায় জিডি করে রেখেছে। যে কারণে পুলিশ বিনিয়োগকারীদের প্রতিবাদ জানাতে দিচ্ছে না। কিন্তু আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আগামীকাল বিনিয়োগকারীরা ডিএসই’র সামনে বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাবে। এরপর বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আইসিবি ঘেরাও করা হবে। এবং পরবর্তীতে বিএসইসি ঘেরাও করার কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান-পতন থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭১১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৮১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৬৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ২৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৯৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ডিএসই’র সূচক ছিল ৪৬৯৮.৫৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ বিগত প্রায় ৩ বছরের সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে সূচক।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩৫টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ১৪৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।