পতনের শেষ প্রান্ত থেকে আজ কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই টানা ছয় দিন যাবৎ পুঁজিবাজার বড় ধরনের পতনের কবলে পড়ে। লেনদেনও ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছিল। মূলত এর চেয়ে আর তলানিতে কি যাবে? তাই বাধ্য হয়েই সূচকে আজ উত্থান ঘটেছে। তবে বাজার পতনের জন্য অনেকেই বিভিন্ন ইস্যুকে দায়ী করলেও এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ ইতিবাচক ধারায় লেনদেন করছে দেশের পুঁজিবাজার। আজ শেয়ার বিক্রয় চাপ থেকে বেরিয়েছে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। লেনদেন ও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের অধিকাংশের পাশাপাশি মৌলভিত্তির সব খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এতদিন টেনে নামালেও আজ উত্থানে ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন। মূলত হতাশার চাপ-ক্ষোভ কমিয়ে আজ শুরু থেকেই সূচক উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা অহেতুক আতঙ্কিত। যার কোন ভিত্তি নেই। এখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে কম দরে শেয়ার কেনার ফায়দা লুটছে কোন এক পক্ষ। যে কারণে দরপতন অব্যাহত রেখে কম দরে শেয়ার সংগ্রহ করেছেন মহলটি। অনেকে একসঙ্গে মিলে একই ধরনের আচরণ করার ফলে এমন নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়। বড় বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকে একসঙ্গে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তাতে বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এতে শেয়ারের দাম কমতে থাকে। আর দাম যখন কমতে থাকে, তখন নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা তা থেকে সুবিধা নিতে চান, অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। একপর্যায়ে গিয়ে দাম অনেক কমে গেলে বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে শুরু করেন। তখনই দেখা যায় বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। এটি যোগসাজশের একটি বাজে খেলা। আর এর মাশুল দিচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরু থেকেই সৃষ্ট ক্রয় চাপে বাড়তে থাকে সূচক। এরই ধারাবাহিকতায় টানা ছয় কার্যদিবস পতনের পর উত্থানে ফিরলো বাজার। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫০১৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১৬৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭৫৮ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯২টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৯৮৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৭৪৮ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৭৫ কোটি ৫১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৫২ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ২৬৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৩টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪০ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। তাই ঝুঁকির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রফিট দিতে হবে। কিন্তু এখানে সেটা দেখা যায় না। পুঁজিবাজার শুধু ইকুইটিনির্ভর। যখন একজন বিনিয়োগকারী ইকুইটিতে বিনিয়োগ করে লোকসান করেন, তখন সেই লোকসান পূরণের জন্য বিপরীতে কোনো ভালো পণ্য নেই। বাজার ভালো করতে চাইলে নীতিগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। যদি সেটা না পারে তাহলে বাজার যে অবস্থানে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা, সেটা সম্ভব নয়। তবে উত্থান-পতনের সময় বাজার স্থিতিশীল রাখা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য বলেন, বিনিয়োগকারীদের বাফেট হতে হবে। পাঁচ থেকে ছয় বছর বিনিয়োগ করে রাখেন, দেখবেন এমনিতেই মুনাফা হবে।