Decision Maker

রিজার্ভে করারোপের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে বিএসইসি

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভের ওপর করারোপ করার প্রস্তাবের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন।

আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এর তৈরি করা পাবলিক ইস্যু রুলস তথা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আইন এর সংশোধনী এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারে লক-ইনের মেয়াদ সংক্রান্ত যৌথ প্রস্তাবনা বিএসইসিতে জমা দেওয়ার সময় আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, পাবলিক ইস্যু রুলসের বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হলেও সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা ওঠে। স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে স্টক বা বোনাস ডিভিডেন্ডের পাশাপাশি রিজার্ভে করারোপের বিষয়টি আলোচনায় আনেন। তখন বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রস্তাবিত বাজেটে নানা অসঙ্গতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করার আশ্বাস দেন। এসময় তিনি বলেন, রিজার্ভের উপর করারোপ করার বিষয়টি নিয়ে গতকালই এনবিআর চেয়ারম্যান তা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এটা নিয়ে হতাশার কিছু নেই। আর বাজেট তো এখনো পাস হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটের পর কোনো বিষয় অসঙ্গতি হলে তা পাস হওয়ার আগে ঠিক করা হয়।পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ করে এমন কিছু বাজেটে থাকবে না।

স্টেকহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আশা করি আপনারা সম্মিলিতভাবে আইপিও সংশোধনীর বিষয়ে বাজারের জন্য ভালো এমন কিছু প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া এরইমধ্যে আরও কিছু প্রস্তাবনা জমা পড়েছে। সব কিছু যাছাই-বাছাই করে বাজারের জন্য যা ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্তই নেয়া হবে।

উল্লেখ, গত মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ এর সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। স্টেকহোল্ডারদের মতামতের জন্য চলতি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ আইনের সংশোধনীর খসড়া প্রকাশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ১০ জুন আলোচিত চার সংগঠন বৈঠকের মাধ্যমে তাদের পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব চূড়ান্ত করে। ওই বৈঠকেই ১৭ জুন বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত করে তার কাছে প্রস্তাবসমূহ ও মতামত কাছে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসের খসড়া অনুসারে, ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি (শেয়ারের অভিহিত মূল্যের আইপিও) আইপিওর আকার হতে হবে ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা কিংবা ইস্যুয়ার কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ, যেটি বেশি হয়। একইভাবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আকার হতে হবে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা কিংবা পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ, যেটি বেশি হয়।

আলোচিত চার স্টেকহোল্ডার প্রস্তাব অনুসারে আইপিওর ন্যুনতম আকার হবে ৩০ কোটি টাকা অথবা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ-এই দুয়ের মধ্যে যেটি বেশি সেটি। তবে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিনিয়োগের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা। একইভাবে বুক বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক অফারের পরিমাণ হবে ৫০ কোটি টাকা কিংবা পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ, যেটি বেশি হয়। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা।

প্লেসমেন্ট শেয়ারের (আইপিওর আগে মূলধন বাড়ানোর জন্য বিক্রি করা শেয়ার) আকার বেঁধে দেওয়ারও প্রস্তাব করছে চার সংগঠন। তাদের প্রস্তাব অনুসারে ফিক্সড প্রাইস ও বুক বিল্ডিং—উভয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রি-আইপিও প্লেসমেন্টের আকার কোনোভাবেই এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ইকুইটির ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

তবে অন্যান্য বিষয়ে সংগঠন চারটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও প্লেসমেন্ট শেয়ারের লক-ইনের বিষয়ে তারা একমত হতে পারেনি। তিনটি সংগঠন বিএসইসির দেওয়া ৩ বছরের লক-ইনের প্রস্তাব সমর্থন করলেও ভিন্ন মত দিয়েছে বিএমবিএ।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রসপেক্টাসে উল্লেখকৃত কোম্পানির সব শেয়ারহোল্ডারের শেয়ারের ওপর তিন বছরের লক ইন প্রযোজ্য হবে। আর লক ইনের মেয়াদ শুরু হবে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের প্রথম দিন থেকে। বিএমবিএর প্রস্তাব অনুসারে লক ইনের মেয়াদ হবে লেনদেন শুরুর তারিখ থেকে দুই বছর কিংবা দুটি এজিএম অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত।

আইপিওর ক্ষেত্রে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের (ইআই) কোটার বিষয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্ত হচ্ছে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে অভিহিত মূল্যে পাবলিক ইস্যুর ক্ষেত্রে ইআইদের বিদ্যমান কোটা ৪০ থেকে কমে ৩০ শতাংশ হবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের (এনআরবি ব্যতীত) কোটা ৪০ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে। অন্যদিকে বুক বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ইআইদের বিদ্যমান কোটা ৬০ থেকে কমে ৫০ শতাংশ হবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিদ্যমান কোটা ৩০ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে স্টেকহোল্ডারদের প্রস্তাব হচ্ছে ফিক্সড প্রাইসের ক্ষেত্রে ইআইদের কোটা ৩০ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা ৬০, মিউচুয়াল ফান্ড ৫ ও এনআরবি ৫ শতাংশ। আর বুক বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ইআই ও মিউচুয়াল ফান্ডের কোটা ৫০, এনআরবি ৫ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়া হবে।

স্টেকহোল্ডারদের প্রস্তাব অনুসারে, ইআই হিসেবে প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড কিংবা গ্র্যাচুইটি ফান্ডের মতো যেকোনো রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ হবে ন্যূনতম তিন বছর। আইপিওতে ইআই কোটার সুবিধা পেতে হলে পুঁজিবাজারে রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের মোট তহবিলের ন্যূনতম ৫ শতাংশ বিনিয়োগ থাকতে হবে।

এছাড়া আইপিওর আগে উত্তোলিত মূলধনের ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল আইপিও আবেদনের আগেই পুরো অর্থ ব্যয় করতে হবে। তবে এ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের প্রস্তাব হচ্ছে আইপিও আবেদনের আগে ৫০ শতাংশ এবং আইপিও সাবস্ক্রিপশনের আগে বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করতে হবে।

Exit mobile version