দীর্ঘ পতনে উদ্বিগ্ন হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আর পুঁজিবাজারের ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বানের কথা উক্ত বৈঠকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আর সরকারের পক্ষ থেকে এমন তৎপরতা দেখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ক্রয় চাপ বাড়িয়েছেন। ফলে শুভ সূচনায় শুরু হলো নতুন সপ্তাহ। আজ পুঁজিবাজারে থাকা সব খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ২০ পয়েন্ট। দীর্ঘ পতনের পর উত্থানই প্রত্যাশা ছিল সবার। কেননা টানা মন্দায় সূচক ও লেনদেন ছিল তলানিতে। দরপতনে নাভিশ্বাস উঠেছিল বিনিয়োগকারীদের। এমন অবস্থা থেকে সরকারের তৎপড়তা সত্যিই প্রশংসনীয়। যা আজ পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে দীর্ঘ মন্দার পর সাধারণ বিনিয়োগকারী হারানো আস্থা ফেরাতে কয়েক দিন সূচকের টানা উত্থান জরুরি। তাহলেই বাজারে গতি ফিরবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ফিরবে বলেও মনে করছেন তারা।

কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজারে বড় সমস্যা হচ্ছে ভালো কোম্পানির অভাব। বাজারে যেসব কোম্পানি আসছে সেগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ। ওইসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে আসে কিন্তু পরে কোম্পানিগুলোর কোনো খোঁজ থাকে না। ফলে ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক বছর ধরে সরকারি বড় সংস্থাগুলোয় বিনিয়োগ হচ্ছে কিন্তু সেগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। যদি সরকারি বিনিয়োগ বাজারে না আসে সেক্ষেত্রে বাজার ভালো করা যাবে না। অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে। এখানে বাজার নিয়ন্ত্রণে উচ্চপর্যায় থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আবার কয়েক বছর ধরে ডিএসই’র যে পরিমাণ রাজস্ব আসার কথা সেটা কমে যাচ্ছে। বাজার ভালো করতে হলে বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরি করতে হবে। বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরি করতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন উৎসাহিত হবে না।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই ক্রয় প্রেসারে টানা বাড়তে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচক কিছুটা বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫০৩৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১৭১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭৬৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৭১ কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫০১৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৭৫৮ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৬ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫১টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০০টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে তাদের অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা করতে হবে। কারণ জেনে-বুঝে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারী ঠকবেন না। এজন্য বিনিয়োগ শিক্ষা নিতে হবে। ঠিক করতে হবে আমরা কোথায় যাচ্ছি। এটা মাছ বাজার বা কাঁচা বাজার নয়। এ বাজার আমাদের দ্বারাই পরিচালিত। আমরাই খরিদ্দার আবার আমরাই বিক্রেতা। যদিও এখানে কেউ কেউ খুব তাড়াতাড়ি বড় লোক হওয়ার জন্য আসে। আমরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য মিথ্যা রটিয়ে আরেকজন ঠকাই। এটা ঠিক না। তাই এই বাজারের সবাইকে ভালো বলা যাবে না। অনেকেই দ্রুত লাভবান হতে চায়। এটা করতে গিয়ে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। কাজেই এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।