বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং বাজেটে প্রণোদনার আশ্বাস সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে না পুঁজিবাজারে। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া আশ্বাসেও প্রতিদিনই বাজারে পতন হচ্ছে। যা দীর্ঘ চার মাস ধরে চলছে। আগে যে দুটি বড় ধস হয়েছিল তার একমাত্র কারণ ছিল বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও কারসাজি। ওই অনিয়ম থেকে বাজার এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি বা তেমন উন্নতি করতে পারেনি। আবার যারা কারসাজিতে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। বাজার ভালো করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কীভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায় এবং সুরক্ষা দেওয়া যায়। শুধু কথা বলার সুরক্ষা নয় বা দু-একটি আইন পরিবর্তন করে বাজার ভালো করা যাবে না। কাজেই বিনিয়োগকারীরা যাতে আস্থা ফিরে পান সেজন্য সম্পূর্ণ বিনিয়োগ নির্ভর আস্থা তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তবে কেউ কেউ বলছেন, কৃষি ব্যাংক, শিল্প ব্যাংক, আইসিবি এবং হাউজ বিল্ডিং করপোরেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কোনো প্রাইভেট খাতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। আবার আইসিবি তার সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। কাজেই ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে আরও প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা উচিত। তাহলে দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। শুধু ব্যাংক খাত দিয়ে দেশের ফাইন্যান্সিয়াল সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের মিশ্র প্রবণতায় শেষ হয় লেনদেন। রোববার লেনদেন শেষে সূচক প্রধান সূচকে গ্রীণ সিগন্যাল থাকলেও অন্য দুই সূচক কমেছে। সোমবার লেনদেনকৃত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫২৫৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৯০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮২৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২১টির, কমেছে ১৮৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩২৮ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ০.৩৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫২৫০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১৯২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৮৩২ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৬৮১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯২টির, কমেছে ১৪৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি হচ্ছে। কিছু ব্যক্তির স্বার্থের কারণে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে না এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী বাজারে আস্থা ফিরে পাচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে এবং আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ফলে সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে ওইসব কালোবাজারিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে সঠিকভাবে বিচার করা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।