২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুকৌশলে তালিকাভুক্ত ১৯ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করা গেলেও বর্তমান উড়ো খবরে কান দেন না বিনিয়োগকারীরা। তাইতো স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানি সম্পর্কে বিভিন্ন নিউজ দিয়ে শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও স্টক এক্সচেঞ্জের মনিটরিং দুর্বলতায় কোম্পানিগুলো নিয়ে কারসাজি করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, কমিশনের সার্ভিল্যান্স, ডিএসই সার্ভিল্যান্স ঠিক মতো কাজ করলে কখনোই একটি কোম্পানির শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানো সম্ভব হয় না। কারসাজি চক্র এসব কোম্পানির শেয়ার দর বাড়িয়ে বিভিন্ন নিউজ ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ফিডিং করিয়েছে। বর্তমানে এসব কোম্পানির শেয়ার দর ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। এতে প্রতারণায় পড়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করেন তারা।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে ২০১৯ পর্যন্ত সময় ১৯ কোম্পানির শেয়ার দর নিয়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো: মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিকস, বিডি অটোকার্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, ইনটেক, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, অগ্রনী ইন্স্যুরেন্স, সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, রহিম টেক্সটাইল, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল), কেপিসিএল, ওয়াটা কেমিক্যাল, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ইপিজিডিসিএল), রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং ব্যাটবিসি।

ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের শেয়ার দর ৬৫৫.৫০ টাকা থেকে ৫৬৩৪ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৭৬০ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০৮৫.১০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ডকে কেন্দ্র করে এ কোম্পানির শেয়ারকে কৃত্রিমভাবে ম্যানুপুলেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দর ৫১.৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৪৪৪ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৬ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানির অস্বাভাবিক ইপিএস বৃদ্ধি, ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর ছড়িয়ে এ শেয়ার দর বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সোনারবাংলা ইস্যুরেন্সের শেয়ার দর ১৩.৩০ টাকা থেকে ৬৯.৬০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৪২৩ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫১.৯০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার দর ৮৯.৩০ টাকা থেকে ৪৪৯ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৪০৩ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২১৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। উৎপাদন দ্বিগুণ করা, মূলধন বাড়ানো ইত্যাদি নিউজ প্রচার করে কোম্পানির শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ রয়েছে।

বিডি অটোকার্সের শেয়ার দর ১০৫.৩০ টাকা থেকে ৪৯০.৫০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৩৬৬ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২২৫.৭০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও বিডি অটোকার্সের শেয়ার নিয়ে আব্দুল কাউয়ুম অ্যান্ড এসোসিয়েটস, মঈনুল হক খান অ্যান্ড এসোসিয়েটস, আজিমুল ইসলাম অ্যান্ড এসোসিয়েটস ও মাহফুজ আলম কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স শেয়ার দর ২০.৫০ টাকা থেকে ৮৮.২০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৩৩০ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ইনটেক অনলাইনের শেয়ার দর ১৬.২০ টাকা থেকে ৬৯.৫০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৩২৯ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ আনা, ব্যবসায়ের পরিধি বাড়ানো, লোকসান থেকে মুনাফা ফেরা ইত্যাদি খবরে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের  শেয়ার দর ১৪ টাকা থেকে ৪৪.৯০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ২২১ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৯.৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ার দর ১৩.৯০ টাকা থেকে ৪১.৬০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৯৯ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩২.৩০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ১৫.১০ টাকা থেকে ৪১.৯০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৭৭ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

রহিম টেক্সটাইলের শেয়ার দর ২১২ টাকা থেকে ৫৪৮.৮০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৫৯ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৩৩.৯০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের শেয়ার দর ৭১.৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৫২ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৩৬ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

কেপিসিএলের শেয়ার দর ৫৮.১০ টাকা থেকে ১৩৯.৩০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৩৯.৭৬ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫২.৪০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ওয়াটা কেমিক্যালের শেয়ার দর ২৬৯.১০ টাকা থেকে ৬২০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৩০ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৮৯.৮০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ার দর ১৮৩.৫০ টাকা থেকে ৪২২.৫০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১৩০ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩২৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ১৮.৭০ টাকা থেকে ৪২.৭০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১২৮ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২১.১০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর ১০৯ টাকা থেকে ২৩৭.২০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ১১৮ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬৭.৮০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ব্যাটবিসির শেয়ার দর ৩১৯৬ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকায় উন্নীত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি থেকে ৭২ শতাংশ মুনাফা অর্জিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৬৯.৯০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

Source: শেয়ারবাজারনিউজ