পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। ২০১০ সালের পর বেশ কয়েকবার নেতিবাচক ধারায় পড়লেও অল্প কিছুদিন পরই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বাজার। কিন্তু সম্প্রতি প্রায় তিন মাস যাবৎ দীর্ঘ মন্দাবস্থায় বিরাজ করছে দেশের পুঁজিবাজার। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পতন যেন ঠেকানোই যাচ্ছে না।
প্রথমদিকে পতনের কারণ হিসেবে অর্খমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের দেওয়া বক্তব্যকে দায়ী করছেন অনেকে। অর্খমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএসইসির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “পুঁজিবাজার কত নীচে নামতে পারে; আমি দেখতে চাই”। কথাটি তিনি সাধারণভাবে বললেও এটিকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছেন দুষ্টুরা।
এরপর “সব বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স আইডিন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হবে” বলে এনবিআর’র এক বক্তব্যকে পতনের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। আসলে এনবিআর এ বিষয়টি সরাসরি এভাবে বলেনি। পরে এনবিআর ও ডিএসইর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ভুল ভাঙ্গানো হয়েছে।
এরপর আবার প্লেসমেন্ট শেয়ার ও দূর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও)কে উল্লেখ করে বিএসইসিকে দায়ী করা হয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএসইসি প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ারে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা শিথীল করেছে। পাশাপাশি নতুন করে আইপিও আবেদন না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ডিএসইর স্মল ক্যাপ প্লাটফর্ম চালূ করা হয়েছে। পরিচালকদের শেয়ার বিক্রিতে লাগাম টেনে ধরার কৌশল নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এরপর আবার বাজারের তারল্য সংকট নিরসনে রাষ্টায়ত্ত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)র সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ তহবিল দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। আইসিবির এ দাবিও পূরণ করা হয়েছে। রাষ্টায়ত্ত্ব এ সংস্থাটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খুব শিগগীরই ৮৫৬ কোটি টাকা পাচ্ছে।
বাজারের গতি ফেরাতে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা থেকে অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানিকে বাদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে দাবি করেছে বিএসইসি। এ বিষয়েও ইতিবাচক মত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এনবিআরের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রীও একাধিকবার বলেছেন বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য চমক থাকছে। এসব বিষয়ে তার ওপর আস্থা রাখতে বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে নিজের বক্তৃতায় পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি করলে কঠোর শাস্তির হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের পুঁজিবাজারে গতি ফিরিয়ে আনতে এবং এ বাজারের গভীরতা বাড়াতে এসব সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। এখন সময় হয়েছে অপেক্ষার। সাম্প্রতিক সময়ে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণ হলে বাজার খুব দ্রুত ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করছেন, বাজার সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে। কিন্তু দুই থেকে তিন সপ্তাহ ভালো থেকে আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে আসবে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা্।
তাই বাজার যেন পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে না আসে সেজন্য সঠিকভাবে নজরদারি রাখা ওপর গুরুত্বারোপ করছেন তারা। পাশাপাশি বাজারের মূল বিষয়গুলো যেমন- কোম্পানিগুলোর সুশাসন, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সচেতনতা বৃদ্ধি, কোনো খারাপ মানের কোম্পানি না আসতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে হবে বলে মনে করছেন তারা।
Good writing.