চলতি হিসাব বছরের প্রথম ভাগে ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি উপলক্ষ গেছে, যেগুলো সামনে রেখে দেশে জুতার বিক্রি বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলোও এসব দিবসকে কেন্দ্র করে ভালো ব্যবসা করে। কিন্তু চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবসা খুব একটা ভালো যায়নি।
সম্প্রতি বাটা সুর পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন হয়। এ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথমার্ধে কোম্পানিটির মোট ৪৫৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার জুতা বিক্রি হয়েছে। আর কর পরিশোধের পর কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ২৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। ২০১৮ হিসাব বছরের একই সময়ে ৫১৪ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হয়েছিল বাটা সুর। আর নিট মুনাফা ছিল ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির জুতা বিক্রি কমেছে ১১ শতাংশ বা ৫৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা কমেছে ৫৬ শতাংশ বা ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
আলোচ্য সময়ে বাটা সুর শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪৬ টাকা ৪২ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ টাকা ১১ পয়সা।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বাটা সুর জুতা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা কমেছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ২৮২ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৩১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ২১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ইপিএস হয়েছে ১৫ টাকা ৫৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৪৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ইপিএস ছিল ৩৩ টাকা ৫৬ পয়সা।
জানতে চাইলে কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি বছরে আমাদের ব্যবসা ভালো যায়নি। দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা কম মূল্যের জুতা সামগ্রীর নিয়মবহির্ভূত অবাধ সরবরাহ বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এছাড়া উৎপাদন ও প্রশাসনিক খরচও অনেক বেড়েছে। ডিলারদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। তাই মুনাফা কমেছে।
বর্তমানে ডিলারদের কাছে কোম্পানিটির মোট পাওনা ১৫১ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে ছিল ২১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি ৫৯ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। তবে যেসব পাওনা আদায়ে সন্দেহ রয়েছে, তার বিপরীতে কোম্পানিটি ১১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সঞ্চিতি করেছে। এর আগে কোম্পানিটির নিরীক্ষক ডিলারদের কাছে পাওনা টাকা আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছিল।
২০১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ১০৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আর ওই বছর তৃতীয় প্রান্তিকের নিট মুনাফার ওপর অন্তর্বর্তীকালীন ২৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটির পর্ষদ। সেই হিসাবে কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৮ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের মোট ৩৪৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ সময় ইপিএস ছিল ৭২ টাকা ৭৯ পয়সা। ২০১৭ হিসাব বছরে ১০৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ দেয়ার আগে ২৩০ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল বাটা সু। সে বছর কোম্পানির বার্ষিক ইপিএস ছিল ৮২ টাকা ৩৪ পয়সা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার বাটা সু শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১ হাজার ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা। সমাপনী দর ছিল ১ হাজার ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৯৩৬ টাকা ও ১ হাজার ২৮৭ টাকা।
কোম্পানিটির বর্তমান অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। রিজার্ভ ৪৬১ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৭০ শতাংশ বাফিন নেদারল্যান্ডসের (বিভি) কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বিদেশীদের কাছে ১ দশমিক ৭১ ও অবশিষ্ট ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে।