Decision Maker

৮৬ প্রতিষ্ঠানের গড় লভ্যাংশ ১৫ শতাংশ

২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আট বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৮৬ কোম্পানি। এর মধ্যে ৫৪টি কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে (ফিক্সড ও বুক বিল্ডিং) তালিকাভুক্ত হয়। বাকি ৩২টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয় অভিহিত দরে। বর্তমানে এসব কোম্পানির মধ্যে অভিহিত দরের নিচে রয়েছে ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। ফলে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির কারণে এমন দশা হয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের গড় লভ্যাংশ প্রদানের হার সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। তালিকাভুক্তির পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এসব কোম্পানির গড় লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনো কোম্পানি থেকে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান সন্তোষজনক। প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেই তারা এই ধরনের রিটার্ন দিতে পারে। তবে গড় লভ্যাংশের হার ভালো হলেও এর মধ্যে কিছু কোম্পানি থেকে নামমাত্র রিটার্ন পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার কিছু কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি। এসব কোম্পানি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই কোম্পানি তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বিএসইসিকে আর হিসাবী হওয়া উচিত।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় লভ্যাংশে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জ্বালানি ও শক্তি খাত। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ প্রদান করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার। এই কোম্পানির গড় লভ্যাংশ প্রদানের হার ৭৫ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে মবিল যমুনা। এই প্রতিষ্ঠানের গড় লভ্যাংশের হার ৩৬ শতাংশ। এছাড়া এক্মি ৩৫ শতাংশ, শাহজিবাজার পাওয়ার ৩০ দশমিক ৪০ শতাংশ, ইফাদ অটোস ২৮ শতাংশ এবং ডরিন পাওয়ার ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বর্তমানে অভিহিত দরের নিচে রয়েছে, তাদের মধ্যে জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ১১ দশমিক ১৪, তুংহাই নিটিংয়ের ৫, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ, ফ্যামিলি টেক্সের ২০ দশমিক ৮৩, জেনারেশেন নেক্সটের ১১ দশমিক ৪৩, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টের চার দশমিক ৩৮, অ্যাপোলো ইস্পাতের ১১ দশমিক ৬০, ন্যাশনাল ফিডের ৮ এবং জাহিদ স্পিনিংয়ের গড় লভ্যাংশ প্রদানের হার ১১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে কোম্পানির সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান বেশ দুর্বল। এসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের রিটার্ন পাননি। উল্টো এখান থেকে তারা প্রতারিত হয়েছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ভালোমানের পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।
যদিও বিষয়টি ভিন্নমত পোষণ করেছেন ইস্যু ম্যানেজাররা। তাদের অভিমত, তারা সবসময় ভালোমানের কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করেন। বিএসইসিতে থেকেও কোম্পানি তালিকাভুক্তির সময় তাদের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্তির পর যদি কোনো কারণে আর্থিক অবস্থার অবনতি হয় তখন কারোরই কিছু করার থাকে না। কারণ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা কখন কী হবে, তা কেউ বলতে পারে না। সবাই ভালো ব্যবসা করার জন্য কোম্পানি গড়ে তোলেন। ব্যবসা মন্দা গেলে কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না। কোম্পানি এমনিতেই অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে। এটা ব্যবসারই একটি অংশ। পৃথিবীর সব দেশেই এমন নজির রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যারা কোম্পানি নিয়ে সমালোচনা করেন তাদের সবদিকে বিবেচনা করে কথা বলা উচিত। যে কোনো ব্যবসার ধরনই লাভ ও লোকসান থাকে। পুঁজিবাজারে এলে সব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সবসময় ভালো থাকবে এর কোনো মানে নেই।

Exit mobile version