Decision Maker

আট বছরে অভিহিত দরের নিচে নেমেছে ৯ কোম্পানি

২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আট বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৮৬ কোম্পানি। এর মধ্যে ৫৪টি কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে (ফিক্সড ও বুক বিল্ডিং) তালিকাভুক্ত হয়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত হয় অভিহিত দরে। বর্তমানে এসব কোম্পানির মধ্যে অভিহিত দরের নিচে রয়েছে ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এগুলো হলো জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, তুংহাই নিটিং, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ফ্যামিলিটেক্স, জেনারেশন নেক্সড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, অ্যাপোলো ইস্পাত, ন্যাশনাল ফিড ও জাহিন স্পিনিং।
বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে। কেউ কেউ এ অবস্থার জন্য দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে দায়ী করছেন। তবে ইস্যু ম্যানেজারসহ অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের অভিমত ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে নামতেই পারে, কারণ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা কখন কী হবে তা কেউ বলতে পারে না। সবাই ভালো ব্যবসা করার জন্য কোম্পানি গড়ে তোলেন। কিন্তু কোনো কারণে ব্যবসায় মন্দা হলে কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না। কোম্পানি এমনিতেই দুর্বল হয়ে যায়। এটা ব্যবসারই একটি অংশ। বাইরের দেশগুলোতেও এমন নজির রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন কারণে এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো লভ্যাংশ দিলেও তা শেয়ারহোল্ডারদের মনঃপূত হয়নি, যার জের ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে গেছে। চাহিদায় ভাটা পড়ায় দর কমতে কমতে একসময় তা অভিহিত দরের নিচে চলে আসে।
এদিকে অভিহিত দরের নিচে দাম চলে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) দুষছেন। তারা মনে করেন, বিএসইসি ভালো করে যাচাই-বাছাই না করেই কোম্পানির অনুমোদন দেয়। সে কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর এ পরিস্থিতি হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার ক্ষেত্রে যারা ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে ভূমিকা রাখেন, তারা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, কোম্পানির আর্থিক অবস্থার হ্রাস-বৃদ্ধি স্বাভাবিক ব্যাপার। এর সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কোনো যোগ নেই।
জানতে চাইলে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যারা বলেন দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি হচ্ছে, কিংবা বাজারে আসার পর আর্থিক অবস্থা কমে যাচ্ছে, তাদের ধারণা ভুল। একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে কত বেগ পেতে হয়, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝেন। কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে তার পরিশোধিত মূলধন এমনিতে বাড়ে। ফলে তার ইপিএসও কমে যায়। তার মানে এই নয় যে, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার যে কোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে; মন্দা আসতে পারে। এটা আগে থেকে কেউ জানেন না। বাইরের দেশেও তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়, কিন্তু সেটা নিয়ে এত কথা হয় না। অথচ আমাদের দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে, কিংবা শেয়ারদর কমে গেলে নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়, যার জের ধরে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারদর আরও কমে যায়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাইরের দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতেগুলোতে যে ধরনের সুশাসন রয়েছে, আমাদের দেশে তেমন নেই। এখানকার অধিকাংশ কোম্পানি পারলিক লিমিটেড হলেও পরিচালিত হয় প্রাইভেট কোম্পানির মতো। যে কারণে মালিক পক্ষের কোনো সমস্যা হলে তার মাশুল দিতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীকে। বিদেশে কোম্পানিগুলো এমনভাবে পরিচালিত হয় যে মালিক মারা গেলে বা অন্য কোনো সমস্যা হলে পাবলিকরাই তা চালিয়ে নিতে পারে।
অন্যদিকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার দোষ না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পরমর্শ দেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিএসইসির দোষ না দিয়ে বিনিয়োগকারীরা সচেতন হলে এমনিতেই দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম্য শেষ হয়। বিনিয়োগকারীরা যদি মনে করে বিএসইসির অনুমোদন দেওয়া কোম্পানিটি ভালো নয়, তাহলে তাদের ওই কোম্পানির আইপিওতে আগ্রহ দেখানো উচিত নয়। তারা যদি এমন করেন, তাহলে আইপিও আন্ডার সাবক্রাইব হবে। কয়েকটি কোম্পানির এমন পরিস্থিতি হলে পরবর্তীকালে বিএসইসি আর এমন কোম্পানির অনুমোদন দেবে না। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি কোম্পানির বেলায়ও তা হয়নি। তারা নিজেরাই এসব কোম্পানির আইপিওবিজয়ী হতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। পরবর্তীকালে দোষ দিয়েছে বিএসইসির।

Exit mobile version