Decision Maker

আশ্বাস নিয়ে সংশয়: কঠিন সময়ে যারা টিকে থাকবে তারাই লাভবান হবে

এক্সপোজার সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের সম্মত্তির মতো বড় খবরের পরও পতন ঘটলো পুঁজিবাজারে। দীর্ঘদিনের দাবির মুখে এ সমস্যা সমাধান হতে যাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় একটি সুখবর। তালানিতে থাকা বাজারে আগে যেখানে সামান্য কোন খবরে ব্যাপক উত্থান ঘটত। সেই বাজারই এখন বড় খররেও চলছে ভাঁটির টানে। সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন এক্সপোজার সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে আজ ব্যাপক উত্থান ঘটতে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। কিন্তু তাদের সেই ধারনাকে গুড়োবালিতে পরিণত করলো সূচক। যাতে মর্মাহত বিনিয়োগকারী মহলগুলো। তাহলে কী বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনকে সন্দেহ করছেন বিনিয়োগকারীরা এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বাজার সংশ্লিষ্টদের মনে। তারা বলছেন, গত বছরও সাবেক অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছিলেন। আর বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে একাধিকবার তাগাদা দিতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও বৈঠকগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি গর্ভনর। এবার যদিও তিনি ১ সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তা করবেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যার প্রতিফলন দেখা গেছে আজকের বাজারে।

কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কোনোভাবে এমন পর্যায়ে যেতে দেবে না সরকার যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। এজন্য নিজ নিজ সংস্থার অবস্থান থেকে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি বিএসইসি আইপিও প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্লেসমেন্টধারীদের শেয়ারের লক ইন (বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা) সীমা লেনদেন শুরুর দিন থেকে গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ফিক্সড প্রাইস ও বুক বিল্ডিং পদ্ধতি, প্লেসমেন্ট, আইপিও পরবর্তী সময়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ২ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ-সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য গঠিত ৯০০ কোটি টাকা তহবিলের মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া আইসিবিতে ব্যাংকগুলোর একক গ্রাহকের ঋণসীমার শর্ত শিথিল করা হবে। কেননা বর্তমানে আইসিবিতে সোনালীসহ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকের যে পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে তা একক গ্রাহকের ঋণসীমার তুলনায় বেশি। একক গ্রাহকের ঋণসীমার নিয়মের কথা বলে কোনো কোনো ব্যাংক আইসিবির কাছ থেকে টাকা চাইছে। এ পরিস্থিতিতে ঋণসীমার শর্ত শিথিলের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাজারে তারল্য বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাজেই বাজার আগামী ভালো হতে বাধ্য। আর একই কঠিন সময়ে যারা পুঁজিবাজারে টিকে থাকবে তারাই লাভবান হবে বলেও ধারনা তাদের।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের সামান্য পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে সূচকে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে সামান্য পতন ঘটে। রোববার লেনদেন শেষে সূচক কিছুটা কমলেও বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫২৭৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২১৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮৪৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৩টির, কমেছে ১৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩৫৮ কোটি ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫২৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১২২০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮৫১ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ২২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৮ কোটি ৬ লাখ ৪ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭৯২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২২৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৪টির, কমেছে ৯৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৮৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

Exit mobile version