Decision Maker

আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা: পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াবে দরকার এমন প্রণোদনা

পুঁজিবাজারে অস্থিরতা কাটছেই না। বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার যে ফাটল ধরেছে, তা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত বেশকিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তারপরও যেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারী। চলতি বছরের দ্বিতীয় মাস থেকে পুঁজিবাজারে টানা দর পড়তে দেখা গিয়েছে। পরবর্তীতে এ মাসে বিনিয়োগকারীদের প্রাণের দাবি এক্সপোজার সংশোধন পুঁজিবাজারের জন্য কল্যাণকর বেশকিছু নীতিগত পরিবর্তন এসেছে। তবে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি পুঁজিবাজারে। আইসিবিও শেয়ার ক্রয় করার মত কিছু অর্থ পেয়েছে। কিন্তু তারপরও দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না সূচকে। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে সূচক। এখান থেকে সূচকের মোড় ঘুরানো জরুরি। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থার যে ফাটল ধরেছে সেটা কাটাতে দ্রুত একটা প্রণোদনা দরকার। যা বাজারে তারল্য বাড়াবে। এছাড়া চাহিদার কারণে বাজার বাড়তে থাকলে আবারও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা আরও বলছেন, অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বাজার সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি হচ্ছে। কিছু ব্যক্তির স্বার্থের কারণে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে না এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী বাজারে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে এবং আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ফলে সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে ওইসব কালোবাজারিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে সঠিকভাবে বিচার করা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এছাড়া মানি, ক্যাপিটাল মার্কেট ও ফরেন কারেন্সি এ তিনটি উপাদানের প্রতি সরকারকে বেশি নজরদারি করা উচিত। কারণ, এ তিনটি উপাদান অর্থনীতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে। আবার ব্যাংক খাত নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এর মূল কারণ খেলাপি ঋণ। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংকের অবদান অনেক এটি ঠিক। কিন্তু ব্যাংকগুলো আশানুরূপ পারফরমেন্স করতে পারছে না। বিশেষ করে সুশাসন ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই অর্থনীতি তথা দেশের স্বার্থে এটি রিকাভার করা জরুরি।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের সামান্য উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরু থেকেই সূচকে মিশ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকে গ্রীণ সিগন্যাল থাকলেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.২১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫২৫৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৮৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮২৮ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ১৭৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৫টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩৫১ কোটি ৪৪ লাখ ৯ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫২৫৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১৯০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮২৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২২ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩৪টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৪টির, কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজার থেকে অস্থিরতা কাটছেই না। যদিও সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার প্রকৃত তার প্রতিফলন বাজারে দেখা যায়নি। ফলে দিন দিন বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চরম আকার ধারণ করছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ থেকে পরিত্রাণ চান। তাদের দাবি, পুঁজিবাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। এখানে নিশ্চিয় কোন চক্রের কারসাজি চলছে। তারা কলকাঠি নাড়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন আরও ভারি হচ্ছে। গত চার মাস ধরেই পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক আচরণ অব্যাহত রয়েছে। আর পুঁজিবাজারে উত্থান পতন থাকবে। তবে একটানা এমন পতন সুস্থ বাজারের লক্ষণ নয়।

Exit mobile version