Decision Maker

এই রক্তক্ষরণে আরো কতো মৃত্যু সেটাই দেখার বিষয়

নানা সমীকরনের ভেতর থেকে পুঁজিবাজারে মহা ধসের মতো রক্তক্ষরণ চলছে।এই ক্ষরণে আগেও অনেক মৃত্যু হয়েছে এখন আবারো শুরু হয়েছে।কতো মৃত্যুর বিনিময়ে এই রক্তক্ষরণ থামে তা এখনই বলা মুশকিল।সোমবার একজন বিনিয়োগকারীর ১১ তলার ওপর থেকে ঝাপ দিয়ে মৃত্যুর গুজব রটেছে।এ খবরে আজ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাস্তায় নেমে এসেছে বিনিয়োগকারীরা।বাজারে মহাধস সৃষ্টির পেছনে ডিএসই, সিএসই,আইসিবিসহ আরো অনেক উপকরন থাকা সত্বেও বিনিয়োগকারীদের সকল ক্ষোভ আজ উগড়ে পড়েছে বিএসইসির ওপর। সূচক কমানোর মতো কোনো ক্ষমতা বিএসইসির হাতে না থাকা সত্বেও সাধারন বিনিয়োগকারীসহ সব মহলের ধারনা বিএসইসির অযোগ্যতা ব্যার্থতা এবং ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখার উগ্র বাসনার কারনে আজ বাজারের এই করুন পরিনতি হচ্ছে।তারা বলেছেন, এতোবড় ধসের পরও কোন্ মুখে তারা বিএসইসিতে বসে আছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।তাদের বিশ্বাস বর্তমান চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার চালানোর যোগ্যতা রাখেন না।অথর্ব এই চেয়ারম্যান চলে গেলেই বাজারে একটি পরিবর্তন আসবে।অর্থমন্ত্রীর একেবারে নিরবতাও বাজারের জন্য বড় হুমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।সর্বপরি পুঁজিবাজারের ব্যাপারে সরকারের একেবারেই ঔদাসিন্য বিনিয়োগকারীদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে,ডিএসইর এবং সিএসইর সূচক আজ নেমে গেছে তলানিরও নিচে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮৭ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক কমেছে ২৬৯ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ। আজ উভয় বাজারে লেনদেনও কমেছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্টে; যা গত ৪ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫ সালের ৫মে এই সূচকের অবস্থান ছিল ৪ হাজার ১৪ পয়েন্ট।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯০৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬১ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ ২৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত কার্যদিবস থেকে ২৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কম। গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
আজ ডিএসইতে ৩৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ২৯৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৬৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২ হাজার ৩০০ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বাজারের এই অবস্থায় আজ একটি জাতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ একটি মন্তব্য করেছেন।তিনি বলেছেন,গত দুই বছর ধরে একটি গ্রুপ সিন্ডিকেট শেয়ারবাজারে ভয়াবহ খেলায় মেতেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়েছে।
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, গ্রুপ সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী।
তারা ইচ্ছামতো দর ওঠানামা করিয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সিন্ডিকেটের খেলার পরিণতি এখন মারাত্মকভাবে পড়েছে। তারা টার্গেট করে কোম্পানির শেয়ার কেনে।
সময় হলে আবার বিক্রি করে। তাদের বিক্রি শেষ হলেও বাজারের সূচক কমতেই থাকে। শেয়ারের দরও কমতে থাকে। কিছুদিন পর আবার তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা কেনার পর শেয়ার দর বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের বলয় ভেঙে দিতে যে শক্তিশালী ও দক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকার দরকার ছিল তা নেই। আইন ভঙ্গ করে শীর্ষ পদ ধরে রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তাদের নৈতিক ক্ষমতাই দুর্বল। ফলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ তারা নিতে পারেনি। চরম আস্থার সংকটে সবাই আতঙ্কিত
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের টাকা চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। ইব্রাহীম খালেদ বলেন, বাজারে সুশাসন বলতে এখন কিছু নেই। যারা বাজারে আস্থা ফেরানোর জন্য শক্ত পদক্ষেপ নেবেন তারাই দর্শকের ভূমিকা নিয়েছেন। অথবা কিছুই করতে পারছেন না। কিছু করতে না পারার কারণ হচ্ছে তাদের কোনো কাজ নেই। শুধু দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে দরকার দক্ষ ও শক্তিশালী একটি কমিশন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুনর্গঠন ছাড়া পরিস্থিতি বদলাবে না। আইনি কাঠামোয় শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

  0
  0
  0
  0

Exit mobile version