একদিন পরই ফের সরূপে ফিরেছে পুঁজিবাজার। আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪০ পয়েন্ট। যদিও গতকাল দীর্ঘ পতনের পর সূচকে ১১০ পয়েন্টের মত উত্থান ঘটেছিল। কিন্তু গতকাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর যতটা বেড়েছিল তার থেকে আজ অনেক কোম্পানির শেয়ার দর বেশী কমেছে। আর ক্রমগত শেয়ারের দরপতনে একটু একটু করে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমে আসছে। পুঁজি হারানোর শঙ্কার পাশাপাশি আস্থার সংকট জেঁকে বসেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে বর্তমানে পুঁজিবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে যে টানা দর পতন তা গত ১০ বছরেও হয়নি। যেখানে আমাদের এক বছর এগিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছি। কারণ ২০১৮ সালের এ সময় সূচক যে অবস্থানে ছিল বর্তমানে তার থেকে হাজার পয়েন্ট নিচে অবস্থান আছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু দিন আগে বলেছিলেন ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আর বাড়বে না। তারপরেও কিন্তু অনেক বেড়েছে। এখন ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আবার বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রত্যেক মাসে কমে আসছে। এখন ১১ শতাংশের মতো রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টার্গেট ছিল ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মূল কারণ ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। যার ফলে ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করত, তাহলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এতটা বাড়ত না এবং এ রকম অবস্থা বিরাজ করত না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দায়িত্ব থেকেই যাচ্ছে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বেশ সক্রিয় হতে দেখা গেছে। কিন্তু বাজারে তার ইতিবাচক কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ভালো কোম্পানি আনার জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, পুঁজিবাজারে সরকারি প্রায় ২৫ থেকে ২৬টি কোম্পানি আসবে। কিন্তু কয়েক বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত একটি কোম্পানিও বাজারে আসেনি। সার্বিকভাবে বলা হচ্ছে সরকারি পর্যায়ে দুর্বলতা বা ব্যর্থতা রয়েছে। এর ফলে বাজারের এমনটা ঘটছে।
তবে কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারের উন্নতি করতে হলে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে। অনেকে এ বিষয়টি শুধু মুখেই বলে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেও আনা যেত তাহলে কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে পেত। এসব প্রতিষ্ঠানের না আসার তো কোনো কারণ দেখছি না। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্তসহ বেসরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে এলে বাজারের মৌলিক কিছু পরিবর্তন আসত। আবার গত কয়েক বছরে বাজারে স্বচ্ছতা আনতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এসব পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। তবে মাঝে দু’এক বার ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭৮১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৯৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৮৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৫টির, কমেছে ২৫৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১১০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৮২১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১০৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৭০৪ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৫৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৪৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ১৫৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার টাকা।