একদিন পরই ফের স্বরূপে ফিরেছে পুঁজিবাজার। আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ৩৪ পয়েন্ট। যদিও দীর্ঘ পতনের পর গতকাল এটিতে ২৯ পয়েন্টের বেশী উত্থান ঘটেছিল। কিন্তু গতকাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর যতটা বেড়েছিল তার থেকে আজ অনেক কোম্পানির শেয়ার দর বেশী কমেছে। এমনকি লেনদেনও নেমে গেছে ২ কোটি টাকার ঘরে। আর ক্রমগত শেয়ারের দরপতনে একটু একটু করে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমে আসছে। পুঁজি হারানোর শঙ্কার পাশাপাশি আস্থার সংকট জেঁকে বসেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে বর্তমানে পুঁজিবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার হতাশাজনক অবস্থানে রয়েছে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় কম হচ্ছে এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোও লোকসান গুনছে। আসলে বিএসইসি একার পক্ষে বাজার ভালো করা সম্ভব নয়। এটি ভালো করতে হলে বিএসইসির সঙ্গে ডিএসই এবং সিএসইর সহযোগিতা দরকার। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু এদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব দেখা যায় না। এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ব্যাপক অভাব রয়েছে। শোনা যাচ্ছে বাজার স্থিতিশীল করার জন্য তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। আসলে এ টাকা দিয়ে বাজার ভালো করা যাবে না। বাজার ঠিক করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অথচ আমাদের পুঁজিবাজারে প্রতিনিয়ত বিদেশী বিনিয়োগ কমছে। যা কাম্য নয় বলেও মনে করছেন তারা।
কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজার তথা ফিনান্সিয়াল সেক্টরে যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসইসি প্রভৃতি সংস্থার কিছু কর্মকর্তার আয়ের হিসাব নেওয়ার দরকার। অর্থাৎ এখানে একটি শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। বিশেষ করে বিএসইসির কিছু কর্মকর্তার। কারণ অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের চাকরির অবস্থান অনুসারে আয়ের কোনো মিল নেই। যদি একটি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন, দেখবেন সবাই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। কারণ এসব ব্যক্তির কারণে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি সরষের ভেতর ভূত থাকে তাহলে বাজার ভালো হবে কী করে। কাজেই পুঁজিবাজারে একটি শুদ্ধি অভিযান জরুরি।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান থাকলেও ১৫ মিনিট পর সেল প্রেসারে টানা নামতে থাকে সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৬৭৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬২৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৮টির, কমেছে ২৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৬৯ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৭১২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৬৩৮ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৫ কোটি ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৬ কোটি ৯৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৪৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৬৪৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৩টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৩টির, কমেছে ১৬০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারের উন্নতি করতে হলে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে। অনেকে এ বিষয়টি শুধু মুখেই বলে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেও আনা যেত তাহলে কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে পেত। এসব প্রতিষ্ঠানের না আসার তো কোনো কারণ দেখছি না। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্তসহ বেসরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে এলে বাজারের মৌলিক কিছু পরিবর্তন আসত। আবার গত কয়েক বছরে বাজারে স্বচ্ছতা আনতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এসব পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।