শেয়ারবাজারে লাগাতার দরপতন ঠেকাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শেয়ার কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যাবতীয় পলিসি সাপোর্টের প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গেল সপ্তাহে এডি রেশিও বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গতকাল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদান করে উক্ত কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওর আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষ বিনিয়োগে সুযোগ প্রদান করে আরেকটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি গতিশীল পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সহায়ক ভূমিকা পালনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে খাদের কিনারায় পড়ে থাকা পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে কান্ডারির ভূমিকা পালন করায় বাজার সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষ থেকে বেশ প্রশংসনীয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এরকম সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। অবশ্য এই সময়ে বাজার থেকে শেয়ার কিনলে ব্যাংকগুলোই বিপুল পরিমাণ মুনাফা নিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে। এবার বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে গতিশীল করতে পুঁজিবাজার স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্ব নেওয়ার পালা এসেছে।
কারণ ২০১০ সালে মার্কেট ক্রাসের অন্যতম কারণ ছিল ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার কমিয়ে ফেলা। যখন ব্যাংকগুলো দেখলো শেয়ার দর আকাশচুম্বী তখনই শেয়ার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা বের করে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় মার্কেট মেকারের দায়িত্বে কেউ না থাকায় এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এতো নিচে অবস্থান করছে যে সেই সুযোগটি পুনরায় কাজে লাগাবে ব্যাংকগুলো। এখন কম দরে শেয়ার কিনে পরবর্তীতে মার্কেট যখন আবার বুম হবে তখন যে অধিক সেল প্রেসার দিয়ে আরেকটি ক্রাসের সৃষ্টি যে করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই আগে থেকেই পুঁজিবাজার স্টেকহোল্ডারদের মার্কেট মেকারের দায়িত্ব পালন করে প্রফেশনাল আচরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যদি টপ লেবেলের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানকে মার্কেট মেকারের দায়িত্ব প্রদান করে তাহলে এই মার্কেটে আর কখনো ক্রাস হবে না, শেয়ারবাজার তলানিতেও পড়ে থাকবে না। অর্থাৎ সবসময় বাজারে গতিশীল প্রভাব বিরাজ করবে। এতে পুরাতন বিনিয়োগকারীদের লোকসান কাভার হওয়ার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে বিনিয়োগ করার আস্থা পাবে। শেয়ারবাজারের চেয়ে ক্যাসিনোতে বেশি লেনদেন হয় এই অপবাদ দিয়ে যারা শেয়ারবাজারকে ক্যাসিনোর সঙ্গে তুলনা করে জুয়ার বাজার বানাতে চায় তারাও শিক্ষা পাবে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ক্যাপিটাল গেইন ও ডিভিডেন্ড ইনকাম এই দুইভাবে মুনাফা করার জন্য ব্লু চিপস শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। যেসব কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড দেয়, ভালো ইপিএস দেখায় সেগুলোর শেয়ারের প্রাইসে রিফ্লেকশন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখা গেলেই বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরে। ভালো কোম্পানি রেখে যদি দেখা যায় গুটি কয়েক ‘জেড’ ক্যাটাগরি ও বন্ধ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি পায় তখন নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে না। আর্নিং বাড়লেও শেয়ারের দাম যদি না বাড়ে তখন শেয়ারবাজারে মানুষ বিনিয়োগ করবে না।
এখন ব্যাংক ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর উচিত ভালো কোম্পানিগুলোকে পেট্রোনাইজ করা। ব্লু চিপস শেয়ার, কিছু ভালো ব্যাংক, কিছু ভালো লোকাল কোম্পানি, কিছু ভালো সরকারি কোম্পানি এরকম ন্যূনতম ৫০টি কোম্পানির শেয়ারকে যদি ভালো মুভমেন্ট করানো যায় তাহলে যারা সাইডলাইনে বসে রয়েছেন তারা বাজারের প্রতি ভালো সিগন্যাল পাবেন। মার্কেটটি যে রিয়েল ফরম্যাটে উঠছে, এখানে বিনিয়োগ করা যায় তখন সেই মেসেজটি তারা পেয়ে যাবেন।