Decision Maker

কপারটেকের তালিকাভুক্তি ইস্যুতে ডিএসই-সিএসইর মতানৈক্য

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার প্রক্রিয়ায় থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়া নিয়ে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। গেল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পর্ষদ সভায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্যদিকে একই দিন অনুষ্ঠিত সভায় কপারটেককে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতামত জানতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ।

কপারটেকের তালিকাভুক্তির অনুমোদন প্রসঙ্গে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, লিস্টিং রেগুলেশন অনুসারে আমরা কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গত বৃহস্পতিবার সিএসইর পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কপারটেকের তালিকাভুক্তির বিষয়ে ডিএসইর সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ডিএসইর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার পর্ষদ সভা শেষে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান জানিয়েছিলেন, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যের যথার্থতা যাচাই করে পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এতে এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনে যেসব অসংগতির কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছুর সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, আইপিওর চাঁদা গ্রহণ ও শেয়ার বরাদ্দের লটারি সম্পন্ন করা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রসপেক্টাসে উপস্থাপিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেয় ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মধ্যে ৯ মে ডিএসইর পর্ষদ সভায় কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পর্ষদ সভা শেষে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, কপারটেকের আইপিও প্রসপেক্টাসের আর্থিক তথ্যে অসংগতির বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকেও ডিএসইর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাই পর্ষদ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে কপারটেকের আইপিও প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে কোনো অসংগতি রয়েছে কিনা, তা দেখতে বলা হয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক তথ্যে কোনো অসংগতি থাকলে সেটি বিএসইসিকে অবহিত করা হবে।

অন্যদিকে ১৪ মে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন পুনর্নিরীক্ষা করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) চিঠি দেয় এফআরসি। তবে কপারটেকের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আখতারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পুনর্নিরীক্ষা করতে পারছে না বলে আইসিএবির পক্ষ থেকে এফআরসিকে জানানো হয়। এ বিষয়ে আইসিএবির প্রেসিডেন্ট এএফ নেসারউদ্দিন জানান, এফআরসির কাছ থেকে চিঠি পেয়ে আমরা কপারটেকের নিরীক্ষকের কাছে নিরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চেয়েছিলাম। কিন্তু নিরীক্ষা ফার্ম আহমেদ অ্যান্ড আখতারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানের পার্টনার চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে দেশের বাইরে থাকার কারণে চলতি মাসের ৩০ তারিখের আগে তারা কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না। অন্যদিকে এফআরসির পক্ষ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নিরীক্ষকের অসহযোগিতার কারণে আমাদের পক্ষে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন পুনর্নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা চিঠির মাধ্যমে এফআরসিকে জানিয়ে দিয়েছি।

সর্বশেষ গতকাল ডিএসইর কর্মকর্তারা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণসহ এ বিষয়ে এক্সচেঞ্জটির করণীয় জানতে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় ডিএসইর কর্মকর্তারা কপারটেকের প্রসপেক্টাসে আর্থিক হিসাবে অসংগতির বিষয়টি কমিশনের কাছে তুলে এ বিষয়ে তাদের দিকনির্দেশনা চেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

Exit mobile version