Decision Maker

কারসাজি সনাক্ত না হলে সার্ভেইলেন্স সিষ্টেমসের কি দরকার?

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স সিষ্টেমসের নাকের ডগা দিয়ে কারসাজি করে পার পেয়ে যাচ্ছে কারসাজিকাররা। এরা সহজেই বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন করলেও সেটা সার্ভেলেন্সের মাধ্যমে ধরা হচ্ছে না। এতে তারা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন বিনিয়োগকারীরা। যাতে বিএসইসি ও ডিএসই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

দেখা গেছে, চলতি বছরে কিছু কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হয়েছে। যেখানে কারন ছাড়া কোন কোন কোম্পানির শেয়ার দর ৩৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে দেখা গেছে। তবে এক্ষেত্রে কারা জড়িত, তাদেরকে নির্ণয় করতে পারেনি কমিশনের সার্ভেলেন্স বিভাগ।

বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বিভিন্ন সময় বলেছেন, কমিশন অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স সফটওয়্যার স্থাপন করেছে। এর ফলে শেয়ার লেনেদেনে কেউ অসৎ উপায় অবলম্বন করলে, তা সঙ্গে সঙ্গে সনাক্ত করা সম্ভব।

নিম্নে চলতি বছরের মধ্যে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হওয়া কিছু কোম্পানির তথ্য তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নাম সর্বনিম্ন দর সর্বোচ্চ দর পার্থক্য
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স ১৫.৩০ ৬৭.৩০ ৩৪০%
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ১৩৪১.৪০ ৪৯০৪.২ ২৬৬%
ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স ২৫.৭০ ৮৩.৮০ ২২৬%
ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৭১.৮০ ২২২ ২০৯%
প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স ১৭.৩০ ৪৩.২০ ১৫০%
অগ্রনি ইন্স্যুরেন্স ১৭.৬০ ৪২.৭০ ১৪৩%
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ১৮.৬০ ৩৮.৭০ ১০৮%
ইনটেক ৩৩.৮০ ৬২.২০ ৮৪%
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল ৯৬.৭০ ১৭৬.২০ ৮২%
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স ১৮.৯০ ৩৩.৪০ ৭৭%
ইউনাইটেড পাওয়ার ২৮১.১০ ৪১৯.১০ ৪৯%
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ২৯.১০ ৪০ ৩৭%
ওয়াটা কেমিক্যাল ৪৮৩.৮০ ৬০২.২০ ২৪%
রহিম টেক্সটাইল ৩৬৫.৪০ ৪৫১.৫০ ২৪%

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্তেও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উত্থানের তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে ডিএসই কর্তৃপক্ষ সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, অগ্রনি ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, ওয়াটা কেমিক্যাল ও ইউনাইটেড পাওয়ারের অস্বাভাবিক উত্থানে কোন কারন খুঁজে পায়নি। তারপরেও ডিএসই শুধুমাত্র এই নামমাত্র তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই দর বাড়ানোর পেছনে জড়িতদেরকে খুজে বের করে আইনের আওতায় আনেনি।

সার্ভেইলেন্স সিস্টেমস পর্যালোচনায় রয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান। ২০১০ সালের পর থেকেই তিনি এই বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। সার্ভেইলেন্স সিস্টেমের কার্যকারিতা বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অনেকটাই গোপনীয়ভাবে করা হয়। বাজার চলাকালে লেনদেন পর্যালোচনা করা হয়। এই সফটওয়ারে এলার্ট সিস্টেম রয়েছে, অস্বাভাবিকতা এলার্ট আসে। আর সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করা পর কারসাজি হচ্ছে কিনা সেটা দেখা হয়। তদন্ত কমিটিও গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

সংঘবদ্ধ কোনো কারসাজি ঠেকানো সম্ভব কিনা এমন এক প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানীর শেয়ারে সংঘবদ্ধ কারসাজি হচ্ছে কিনা এমন সুক্ষ হিসাব করা খুব কঠিন। শেয়ারে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতেই শেয়ার দামে উত্থান-পতন হয়। কিন্তু লেনদেনের ধরন দেখে কারসাজি হচ্ছে কিনা সেটা বুঝা যায়। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সার্ভেইলেন্স সিস্টেমের এলার্ট ধরে খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হয়। এটাতে কারসাজি ঠেকানোও সম্ভব হচ্ছে।’

Exit mobile version