Decision Maker

কারেকশনেও লেনদেন ছাড়ালো ৫ ‘শ’ কোটি টাকা: ব্যক্তি খাত বিকশিত করতে সংস্কার জরুরি

বর্তমান পুঁজিবাজার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। আগামীতে আরও ভালো হবে। ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে ধস নেমেছিল, তা অনেকে দেখেনি। কিন্তু ২০১০ দেখেও যেসব বিনিয়োগকারী ভেঙ্গে পড়েনি, দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারের সাথে লেগে পরিপক্ক হয়েছেন, তারাই এখন প্রফিট টেকিংয়ে। কেননা বর্তমানে মার্কেট পরপর কয়েক কার্যদিবস আপ ট্রেন্ডে থাকলে পরে আবার ডাউন ট্রেন্ডে চলে যায়। এটা ক্ষুদ্র বিনিয়োগরীর জন্য বেশ সুখবর। কারণ এতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে। আর বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় পূর্বশর্ত হিসেবে বিনিয়োগকারীরা এটিকে এনজয় করেন। কারণ উর্ধ্বমুখী বাজারে শেয়ার বিক্রি করে কারেকশনের বাজারে আবার শেয়ার কেনার সুযোগ পান। আর তাদের কেনাকাটার জন্যই আজ লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। একটি গতিশীল বাজারের অংশ হিসেবে এ ধরনের সংশোধন বিনিয়োগকারীকে বাজারের প্রতি আরও আকৃষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, মাঝেমধ্যে বাজার সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক। বাজার কারেকশন বা শেয়ারের দর সংশোধন হবে সবাই এটাই চেয়েছিলেন। সেজন্য বিনিয়োগকারীরাও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন। কেননা টানা উত্থান কিংবা টানা পতন কোনোটাই বাজারের জন্য ভালো নয়। আর উত্থানের বাজারে যেসব সচেতন বিনিয়োগকারী কিছু কিছু শেয়ার বিক্রি করে টাকা বের করেছেন তারাও পরবর্তীতে ক্রয় করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। পাশাপাশি অনেকই আজ নতুন করে প্রফিট টেকিং করেছে। তাই আজকের এ পতন অনেক বিনিয়োগকারীর মনেই আস্থার সঞ্চার করেছে। তবে কিছু কিছু হুজুগে বিনিয়োগকারীরা বাজারে উত্থান-পতন থাকা স্বাভাবিক এটা মানতে পারে না। ফলে শেয়ারের দর কমলে দ্রুত তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এটা না করে তাদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পুঁজিবাজার। এখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যক্তি খাত বিকশিত হয়। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। কাজেই খাত বিকশিত করতে দরকার পুঁজিবাজারের সংস্কার। যেমন, আমাদের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাংকনির্ভর হয়ে পড়েছে। কোম্পানিগুলো চড়া সুদে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসহ সরকারও তাদের আনছে না। ফলে পুঁজিবাজার খুবই ছোট পরিসরে রয়ে গেছে। এখন দরকার ক্যাপিটাল মার্কেটকে আরও শক্তিশালী করা। ক্যাপিটাল মার্কেট দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হওয়া উচিত, কমার্শিয়াল ব্যাংকিং নয়। এজন্য পুনর্গঠন জরুরী। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রডাক্ট আনা উচিত। ভালো কোম্পানি না থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে না। বাজার তার সম্ভাবনাময় স্থানে পৌঁছতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সুশাসনের অভাব রয়েছে। আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের সামান্য পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে নামতে থাকে সূচক। শেষদিকে একবার ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় সূচক। বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫২২৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২০৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮৪১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৩টির, কমেছে ১৯৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ০.২৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫২২৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১২০৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮৪৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৭২ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৯টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ১২১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ২১ লাখ ৮ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে অযথা টেনশনের কিছু নাই। কারণ সরকারের মার্কেটের উপর সার্ভিলেন্স টিমের কড়া নজরদারী আছে। তবে সরকারেরও মাথায় রাখতে হবে, যে এটা যেন শর্টটার্মের জন্য না হয়। মার্কেট যাতে দীর্ঘ মেয়াদে ভাল হয় সে চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। যেমন সব টাকা একবারেই বিনিয়োগ না করে সেটাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে বিনিয়োগ করে আপদকালীন সময়ের জন্য কিছু টাকা পোর্টফোলিওতে ফেলে রাখা দরকার। যাতে ঝুঁকি এড়িয়ে ভালো মুনাফা করা সহজ হয়।

Exit mobile version