Decision Maker

ঘুরে দাঁড়ানোর মত খবর থাকলেও জিপির কারণে আশা পূরণ হয়নি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপে দরপতন হয়েছে। আর এতে দ্রুতি ছড়িয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড। আজ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর প্রায় ৬ শতাংশ কমার প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। কারণ গ্রামীণফোন শেয়ার বাজারের অন্যতম বড় মূলধনী একটি কোম্পানি। আজ দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক পতনে ৩৭.২২ শতাংশ অবদান রেখেছে জিপি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশকে (বিটিআরসি) পাওনা বাবদ ২ হাজার কোটি টাকা আগামী ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে গ্রামীণফোনকে। এমনিতেই বাজারে তারল্য সঙ্কট তার মধ্যে এমন খবরে গ্রামীণফোনের শেয়ার দর আজ ১৮.৪০ টাকা কমে গেছে। এর অনেক বড় প্রভাব পড়েছে বাজারে। যদিও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর মত মার্চেন্ট ব্যাংক ও তার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীদের শেয়ার ব্যবসার অনুমতি সংক্রান্ত খবরটি ছিল। কিন্তু জিপির শেয়ার বিক্রির কারণে সে আশা আর ‍পূরণ হয়নি বলেও মনে করছেন তারা।

কেউ কেউ বলছেন, গত ছয় থেকে সাত বছরে অর্থনীতির উন্নয়নের একটি গতিধারা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ফলে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সবাই প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশগুলোর মধ্যে একটি। অর্থাৎ সবকিছুই ইতিবাচক হিসেবে দেখা গেছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে তার কিছু প্রতিফলন হচ্ছে না। বরং দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। আর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যেখানে পুরো বছরে যা নেওয়ার কথা, সেখানে চার মাসে চার ভাগের তিন ভাগই ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে। যদি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ না বাড়ে, শুধু সরকারি খাতে সব ঋণ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে অর্থনীতি উন্নয়নে ভয়ের একটি বিষয় রয়েছে। কারণ, একদিকে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, বাজারে তারল্য সংকট চলছে; অন্যদিকে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো নেই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, জুন ক্লোজিংয়ের ভালো লভ্যাংশ ও তৃতীয় প্রান্তিকে যেসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেটাও ভালো কিছু দেখাতে পারেনি। আর এসব কারণেই সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তেমন নেই বলেও ধারনা তাদের।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরুতে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৬৮৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৭৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৩৮ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৩৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৮টির, কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৭৭ কোটি ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৭০৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৮১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৬৫০ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪২১ কোটি ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৪৩ কোটি ৮১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৬৬২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৮টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১১টির, কমেছে ১০২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের সব সময় একটি কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে নতুন-পুরোনো এমন অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা না বুঝে অন্যের পরামর্শে বিনিয়োগ করেন। তাদের এমন প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। আর বর্তমান পরিস্থিতি কাটাতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যহারা হলে চলবে না। যে কোনো পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ। পুঁজিবাজারে লাভের পাশাপাশি লোকসানের ঝুঁকিও রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে বলেও ধারনা করছেন তারা।

Exit mobile version